করোনার দুঃসময়ে এলো খুশির ঈদ

33

করোনার ভয়াবহ থাবায় জীবনযাত্রার নির্ধারিত ছক ওলটপালট হয়ে গেছে। ঈদ আসলেও যেন সংকোচহীন চিত্তে¡ উৎসবের আমেজ নেই বলা চলে। একে অপরের সাথে কোলাকুলি কিংবা হাত মিলাতে মাঝখানে দেয়াল হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি। এ যেন করোনার কান্নাভেজা খুশির ঈদ। এ ঈদে উচ্ছ¦াস আছে। সাথে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। রমজানের একেবারে শেষ প্রান্তে ঈদ উৎসবের সুগন্ধ আসতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। রোজা আর ক’টা রাখতে হবে? কোন দিন ঈদের নামাজ পড়বে মুসলমানরা?- ইত্যকার প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাওয়ার মধ্যেই মানুষের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা ‘এক ফালি বাঁকা চাঁদের’। যা দেখার পরদিনই ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী পবিত্র ঈদ-উল ফিতর।
পুরো রমজান মাস রোজা পালনের পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। খুশির উৎসব। এ উৎসব নিয়ে আসে খুশির বার্তা নিয়ে। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনারে আজ বিলিয়ে দে/ শোন আসমানি তাগিদ’ নজরুলের এই বিখ্যাত গানটি শোনা যায় ‘চাঁনরাতে’। ঈদ মানে সীমাহীন আনন্দ। বছরজুড়ে নানা প্রতিক‚লতা, দুঃখ-কষ্ট, বেদনা সব ভুলে ঈদের দিনে পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়। পেছনের সব গ্লানি মুছে যায়। সাধ্যমতো নতুন পোশাক পরে পূত-পবিত্রতার সৌকর্যে ঈদগাহের পথে নামে ধর্মপ্রাণ মানুষ।
ঈদের দিন সকাল থেকে রাত অবধি অপার আনন্দে ডুবে থাকে সবাই। ঈদ ধনী-গরিবের নির্মল আনন্দ ও পুণ্যের এক দুর্লভ অনুভূতি যা ভাগাভাগি করলে ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ঈদের নতুন চাঁদ দেখামাত্র বেতার-টিভি ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় খুশির বার্তা ঈদ মোবারক। কিন্তু গতবারের ঈদের মতো এবারের ঈদও করোনাময়। অর্থাৎ শঙ্কাময়। কারণ সরকারি তরফে ইতোমধ্যে ঈদের দিন কোলাকুলি ও হাত মেলানোর ক্ষেত্রে বারণ করা হয়েছে।
ঈদের জন্য একটি বছর সবাই অপেক্ষায় থাকে। ঈদ আমাদের আনন্দের সহযাত্রী। যাতে ছোট বড় সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যাই। শত্রূ-মিত্র, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ থাকে না। ঈদ মানে হাসি আর আনন্দ, ঈদের খুশি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিই।
ঈদ উৎসব পালনের ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। তা হলো- আরবের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে নানারকম উৎসবের প্রচলিন ছিল। উকাজের মেলা ছিল এ ধরনের একটি বর্ণাঢ্য আয়োজন। এসব উৎসব প্রায়শই নানা অশ্লীল ও রুচিহীন আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ থাকত। অপরদিকে মুসলমানদের জন্য তখন পর্যন্ত কোনো উৎসবের প্রচলন হয়নি। তাদের নিষ্কলুষ বিনোদনের বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেন। হিজরির ২য় সাল থেকেই রমজান মাসের শেষে ঈদ উল ফিতর উৎসব উদযাপনের সূচনা হয়। বাংলাদেশে ঈদ উৎসবে গ্রামবাংলায় এমন কী শহরেও মেলা বসে। বাহ্যিক দিক থেকে ঈদ আনন্দময় হয়ে ওঠে নতুন এবং সুন্দর পোশাকে, খাওয়া-দাওয়ায়। বিশেষ করে ছোটদের কাছে। ঈদের নামাজ আদায় শেষে তারা বড়দের সালাম করে। পায় সেলামি, তাতে খুশিতে আটখানা। ফিতরা-দান সে আয়োজনের পূর্ণতা রক্ষায় বিশেষ সহায়তা করে। এই উৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ হয় সর্বাত্মক এবং সর্বজনীন। কারণ সব মানুষ মিলেমিশে গড়ে তুলেছে মানব সমাজ। সেই মানব সমাজের কল্যাণের কথাই বলে ইসলাম। ঈদ এজন্য সকলের কল্যাণকর একটি উৎসব। ঈদ উৎসব এই শিক্ষা দেয় যে, নিজের সম্পদ নিজে ভোগ করলেই হবে না, সে সম্পদে অন্যেরও অধিকার আছে। কারণ ঈদ উৎসবের মূল বাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সম্প্রীতি। সকলের মাঝে একতা ও শান্তি। ‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরণী বেহেশতী/ দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তী/ জাকাত দেবো ভোগ-বিলাস, আজ গোস্বা/ বদমস্তি/ প্রাণের তশতরীতে ভরে বিলাব তৌহিদ/ চলো ঈদগাহে’।
ঈদ-উৎসবের আরেকটি অনুষঙ্গ হলো খাওয়া-দাওয়া। পোলাও- কোরমা, সেমাই, ফিরনি, পায়েশ, বিরিয়ানি আরো কতো কি।
জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট ও বৈষম্য-বঞ্চনা ঘোচাতে পারে না একটি ঈদ। কিন্তু সবকিছুর ভেতর দিয়েও একটুখানি আনন্দ, একটুখানি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করতে পারে। এ সমাজ-সংসার লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক। করোনামুক্ত হোক বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এটাই প্রত্যাশা মানুষের।
এদিকে ধর্মীয় প্রবক্তারা বলছেন, আজ আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই কাল ঈদ। অন্যথা হলে পরদিন। তবে আগে থেকেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পড়েছে সাজ সাজ রব। ধর্মের সাথে নিজস্ব সংস্কৃতির মিশেলে বাঙালির ঈদ অপূর্ব অসাধারণ। বাহারি পোশাক, রকমারি সাজ, বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, হল্লা করে ঘোরাফেরা সবই ঈদকে করে বৈশিষ্ট্যময়। আল্লাহর নির্দেশমতো মাসজুড়ে অতি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত রোজা পালন করে বাংলাদেশের মুসলমানেরা। রোজা কে রাখেনি সেটা মুখ্য নয়, একসাথে বসে ইফতার করার কি যে আনন্দ! ঈদ উপহার পাবার আনন্দও এখানে নতুন মাত্রা যোগ করে।
ঈদ উদ্যাপনের বিষয়ে ইসলামিক ফ্রন্টের নেতা মাওলানা মঈনুদ্দিন হালিম জানান, আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী রমজানের পর আকাশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উদ্যাপন করেন মুসলমানরা। সেই হিসেবে আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। আর কাল আকাশে চাঁদ দেখা গেলে পরেরদিন ঈদ হবে।