করোনামুক্ত ও সংঘাতমুক্ত পৃথিবীর শান্তি কামনায় শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত

9

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয়েছে এই বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার আবাহন হয়েছিল। গতকাল প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে। দেবী দুর্গা অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। গতকাল সেই বিজয়ের অবিস্মৃত সত্তার স্মরণীয় শেষ প্রার্থনা দিবস। এরপর অশ্বায়নে জলগর্ভে বিসর্জন। আনন্দ আর বেদনার এ সম্মিলনীতে দেশের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি দৈনিক পূর্বদেশের পক্ষ থেকে বিজয়া শুভেচ্ছা। ধর্মীয় বিবরণ মতে, এ বিজয় অর্জিত হয় আদ্যাশক্তি মহামায়ার সক্রিয় ভূমিকায়। মাতৃরূপিণী মহাশক্তি দুর্গা অশুভ শক্তির কবল থেকে বিশ্বব্রহ্মাÐ ও ভক্তকুলকে রক্ষা করেন। এই অমিত চেতনার সঙ্গে আবহমান বাংলার লোকজ সংস্কৃতি যুক্ত হয়ে দেবী দুর্গাকে বাঙালি হিন্দু সমাজ ঘরের মেয়ে হিসেবেই বরণ করে নেয়। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপূজা বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। দুর্গাপূজার শুরু হয় মহালয়ায়। এদিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এর ঠিক পাঁচদিন পর মহাষষ্ঠীতে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মহাসপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা। কদলীবক্ষসহ আটটি উদ্ভিদ একসঙ্গে বেঁধে শাড়ি পরিয়ে একটি বধূ আকৃতিবিশিষ্ট করে দেবীর পাশে স্থাপন করা হয়। এই হল ‘নবপত্রিকা’, প্রচলিত ভাষায় যাকে ‘কলাবউ’ বলা হয়। মহাষ্টমীতে মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেল মহাষ্টমীকার, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমীব্রত, মহাষ্টমী ব্রতউপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা, সন্ধিপূজা ও বলিদান। মহানবমীতে কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা। বিজয়া দশমীতে বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়া দশমী কৃত্য ও কুলাচার অনুসারে বিসর্জনাতে অপরাজিতা পূজা। এই দশমী তিথি বিজয়া দশমী নামে খ্যাত। শুভ বিজয়া উপলক্ষে আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব নাগরিককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দুর্গোৎসবের আয়েজন করেছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের শহর-গ্রামের মÐপগুলোও হিল উৎসবমুখর। হাজার বছরের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনে থাকা বাঙালি প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবের ন্যায় এ শারদ উৎসবেও পরস্পর আনন্দ ভাগ করে নেয়। এ দেশে বিভিন্ন স¤প্রদায় পারস্পরিক সহাবস্থান ও স¤প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে বহু বছর ধরে। এক ধর্মাবলম্বী অন্য স¤প্রদায়ের বিপদে-আপদেও পাশে দাঁড়ায়। এটা বাঙালির চিরচরিত ঐতিহ্য ও স¤প্রীতির পরিচায়ক। মাঝেমধ্যে ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল অশুভ শক্তি এ পরিচয় মুছে ফেলতে তৎপর হলেও সাধারণ মানুষ কখনই একে প্রশ্রয় দেয়নি, এখনও দেবে না। স¤প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গোৎসব উদযাপিত হয়েছে। ভক্তকুল সমবেত হয়েছে পূজামÐপগুলোতে। আইন-কৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি ছিলনা, তবে তারা তীক্ষè নজরদারী ও সজাগ ছিলেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, স¤প্রীতির বিষয়টি কেবল বিশেষ উপলক্ষ বা পর্বে সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্চনীয় নয়। সর্বসময়ে সংখ্যালঘুসহ সব ধর্মাবলম্বার নিরাপত্তা ও নির্বিঘেœ ধর্ম পালন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব ও স¤প্রীতি বৃদ্ধি। দুর্গোৎসবের সঙ্গে বাংলার প্রকৃতিরও রয়েছে নিগূঢ় সম্পর্ক। শরতের শুভ্র কাশফুলের মুগ্ধতা ছাড়িয়ে এ পুজোর পালা চলে। শিশিরভেজা আশ্বিনের সকালে মেতেছে ঢাকের ঢাক। পূজার্থীদের পুণ্যে ভরেছে শরতের হিমেল হাওয়ায়। এ শারদের আহবান, মানব হৃদয়ে পুণ্যের শেতশুভ্র পুস্পরাশি প্রস্ফুটিত হোক। অসুরকে বধ ও অশুভকে বিনাশ করে মানব মনে সঞ্চারিত হোক শুভ চেতনা- এটাই হোক বিজয়া দশমীর প্রত্যাশা। দুর্যোগে দুর্ভোগে স¤প্রীতি আর শান্তিই হোক একমাত্র কাম্য।