করোনাকালীন বড় অঙ্কের বাজেট বাস্তাবায়নে চাই স্বচ্ছতা

39

মহামারী হোক, বা দূর্যোগে দুর্বিষহ পরিস্থিতি যাইহোক রাষ্ট্র থেমে থাকতে পারেনা। তাকে নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। দেশের উন্নয়ন, জনগণের জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে। সঙ্গতকারণে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও আইন প্রণেতাদের সংসদে গিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থে বার্ষিক আয়-ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ তথা বাজেট উপস্থাপন করতে হয়েছে। গতকাল এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদ ভবনে বসেছিল দেশের ৪৯তম বাজেট অধিবেশন। করোনাভাইরাস নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হয়েছে সরকারকে। আগের সব পরিকল্পনা বাদ দিয়ে এবছর করোনাবেষ্টিত বাজেট তৈরি করতে হয়েছে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলেও জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এ ধরনের বাজেট প্রস্তুত করতে হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজস্ব আয় থেকে শুরু করে ব্যয় ও আগামীর পরিকল্পনা সবই করতে হয়েছে করোনাকে ঘিরে। করোনাকে মোকাবিলা করতে দেশের মানুষ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের অনুরোধ আবেদন ও নির্দেশনা প্রায় সবই করোনাকেন্দ্রিক। সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এসব তথ্যই প্রকাশ পায়। জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকানো এবং করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং প্রত্যয় ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রীর তাঁর বাজেট বক্তৃতা প্রদান করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বলা ৩টায় জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন কালে তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলার জন্য সরকার এবার স্বাস্থ্যখাতকে ঘিরে আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনা করছে। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি খাতকেও। বাজেট বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা আকার বাড়িয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের। যারা করোনার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, যারা দরিদ্র হয়েছেন, শ্রমজীবী মানুষ যারা দিনে আনে দিনে খায় তাদের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। একইসাথে বাজেট বক্তৃতায় করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাকিলা করতে এ বছর সরকারি পরিচালন ব্যয় সংকোচনের নীতি অবলম্বন করার কথাও এসেছে।
সূত্র জানায়, করোনা মোকাবিলায় সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে সরকারের ব্যয় বাড়বে, তাই ওই ব্যয় মেটাতে এজন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে। এছাড়া করোনার প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আদায় কমবে এটা নিশ্চিত। তাই ব্যয় মেটানোর সামর্থ্য সরকারের থাকতে হবে।
উল্লেখ্য যে, গতকাল অর্থমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট যা জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ব্যয়ের জন্য মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।
এটি এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলের দাবি অনুযায়ী এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকায় তা দেওয়া হয়নি। তবে স্বাস্থ্যখাতে চলতি বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। শীর্ষ বরাদ্দের পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। সরকার কোভিড-১৯ এর কারণে ক্রমান্বয়ে যে ছাড়গুলো দিয়ে আসছে এবারের বাজেটেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এবারের বাজেট হবে মানুষের জন্য। তাঁর ভাষায়, করোনার প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে আমরা কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করেছি। কারণ কৃষিখাত এবার কারোনাকালে সরকারকে তথা দেশের মানুষকে অকল্পনীয় সাপোর্ট দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় যে যুদ্ধ চলছে সেই যুদ্ধে আমরা অবশ্যই দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জয়ী হবো। যদিও সময়টি কঠিন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ।’ আমরা অর্থমন্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করে বলতে চাই বাজেট সবসময় দেশ ও জাতির কল্যাণেই প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার অভাবে জনগণ পুরোপুরি তার সুফল পায় না। আমরা আশা করি, এবার সরকর সেদিকে মনোযোগ দিবে সবচেয়ে বেশি।