কমে এসেছে ডিমের উত্তাপ

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগের দামে ফিরে এসেছে ডিমের দাম। মাঝখানে ডিজেলের দামবৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ডিমের ডজন ১৬০ টাকা পর্যন্ত উঠে। অথচ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী ডিম আমদানি ঘোষণা দেয়ার পর থেকে কমতে শুরু করে দাম। গতকাল বুধবার ডিমের ডজন ছিল ১২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিছ ডিম বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা দরে।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডিমের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মূল হোতা নেই। পাশাপাশি এখানে কোন কারসাজি হয়নি। যারা ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ করে তারা উত্তরবঙ্গের। তারপরও চট্টগ্রামে অতিরিক্ত দামে ডিম বিক্রি করলে আমরা ছাড় দিইনি। আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে কিনে ভোক্তা পর্যন্ত দুই হাত বদল হয়। আর খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ডিম পৌঁছাতে বদল হয় ৪ হাত। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খামার বা ডিলারের কাছ থেকে সরাসরি ডিম কিনে আনেন। পাইকারি বাজার থেকে ডিম কিনে ছোট ভ্যানে করে তা সরবরাহকারীরা বিক্রি করেন বাজার বা পাড়া মহল্লার বড় দোকানগুলোতে। নগরীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে যে লাল ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ছিল। সেই ডিমের ডজন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে গত মঙ্গলবার ১০০ পিস ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১২০ টাকায়। পাইকারি বাজারেই একটি ডিমের দাম হয়ে যায় ১১ টাকা ২০ পয়সা। অথচ জ্বালানির দাম বাড়ার আগে পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দর ছিল ৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৯ টাকা। তবে ডিমের দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। গতকাল থেকে ডিমের দাম প্রতিটিতে প্রায় ২ টাকা কমেছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, ডিমের দাম এলাকা ও সময় ভেদে পরিবর্তন হতে থাকে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েকটি চক্র ফোনে ফোনে বিভিন্ন এলাকায় ডিমের দাম ঠিক করে দেয়। সে দামেই কেনাবেচা হয়। খামারিরা জানান, এমনও হয় যে, সকালে এক দাম আবার বিকালে আরেক দামে ডিম কেনেন পাইকার ও আড়তদাররা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ডিম ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘আমার এখানে দৈনিক ২ থেকে ৩ হাজার ডিম বিক্রি হয়। ডিমগুলো কিনে আনি পাহাড়তলী বাজার থেকে। মূলত পাহাড়তলী ও উত্তরবঙ্গের কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দামটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। মন্ত্রীর কথা শুনে দাম কমালো, আমরা কমদামে কিনতে পারছি বলে কমদামে বিক্রি করছি।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, নগরীতে দৈনিক ৫০ লক্ষ ডিমের চাহিদা আছে। যার মধ্যে পাহাড়তলী ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে দৈনিক ১৫ ট্রাক ডিম নিয়ে আসে। প্রতি ট্রাকে দুই লক্ষ করে হলেও ৩০ লক্ষ ডিম পাহাড়তলীতে আসছে। পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে যুক্ত হয় আরও ১০ লক্ষ ডিম। এছাড়া প্রতিদিন ভোরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল থেকে একটি ট্রেন ১০ লক্ষ ডিম নিয়ে আসে। আর এসব ডিম সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ, সামরিক, বেসামরিক, সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু ডিমের দাম বাড়তি হওয়ার পর চাহিদার ২০ শতাংশ কমে যায়। এখন দাম কমার পর স্বাভাবিক চাহিদায় ফিরে আসে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘খামারি থেকে বেপারিরা প্রতি পিস ডিম সাড়ে ৯ টাকা করে কিনেন। তা বাজারে আসতে আসতে সবমিলিয়ে ২০ পয়সা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিপিস ডিম ১২ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করেছে একটি চক্র। চক্রটি কারসাজি করে ডিমের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটার চেষ্টা করছিল। তবে সরকারের কঠোরতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পূর্বের মত চট্টগ্রামে ডিমের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে।’