কমান্ডার পদে ৪ যোদ্ধার নড়াচড়া, বাকিরা নীরব

45

রাহুল দাশ নয়ন

সারাদেশে একযোগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০ মে। কেন্দ্র, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় কমান্ড কাউন্সিলের এ নির্বাচনে লড়বেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় কমান্ডার পদে লড়তে চার বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎপর হয়েছেন। মহানগরে বর্তমান কমান্ডার মোজ্ফ্ফার আহমদ ছাড়া আর কারও নাম শোনা না গেলেও জেলায় তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনজনের মধ্যে দুইজনের বাড়ি মিরসরাই, একজনের সীতাকুন্ড। এই তিন জনের নেতৃত্বে জেলায় পৃথক প্যানেলে নির্বাচন হতে পারে। তবে কোন পদে কারা নির্বাচন করছেন তা আগামী ১০ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে জানা যাবে। মহানগর ও জেলায় ১৭টি পদে এবং উপজেলায় ১১৪টি পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও জেলার কমান্ড নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রাকিব হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘খসড়া ভোটার তালিকার কাজ শেষ। আপত্তি দেয়ার নির্ধারিত সময়ও পার হয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেই মনোনয়নপত্র বিতরণ হবে। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, জেলা কমান্ড কাউন্সিল ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল তিন ফরম্যাটে একযোগে নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের পর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন নিয়ে সকলের মাঝে উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আমরা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবো বলে আশা করছি।’
জানা যায়, জেলা ও মহানগরে ১৭টি পদের মধ্যে কমান্ডার পদে একজন, ডেপুটি জেলা কমান্ডার দুইজন, সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) একজন, সহকারী কমান্ডার (প্রচার) একজন, সহকারী কমান্ডার (তথ্য ও গবেষণা) একজন, সহকারী কমান্ডার (অর্থ) একজন, সহকারী কমান্ডার (সাহিত্য ও সংস্কৃতি) একজন, সহকারী কমান্ডার (ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ) একজন, সহকারী কমান্ডার (ক্রীড়া) একজন, সহকারী কমান্ডার (শ্রম ও জনশক্তি) একজন, সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) একজন, সহকারী কমান্ডার (প্রকল্প ও সমবায়) একজন, সহকারী কমান্ডার (শিক্ষা, পাঠাগার ও মিলনায়তন) একজন ও কার্যকরী সদস্য তিনজন নির্বাচিত হবেন। উপজেলায় একজন কমান্ডার, একজন ডেপুটি কমান্ডার, বিভিন্ন বিভাগে সাতজন সহকারী কমান্ডার ও দুইজন সদস্য মিলে ১১টি পদে নির্বাচন হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। খসড়া তালিকা অনুসারে চট্টগ্রামে মোট জীবিত ভোটার আছেন চার হাজার ১৪০ জন। যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আছেন ৮০ জন। সবমিলিয়ে মহানগর ও জেলায় চার হাজার ২২০ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আজ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে।
কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপকালে জানা যায়, মহানগর কমান্ড কাউন্সিলের এবারও কমান্ডার পদে বিনাভোটে জয়ী হতে পারেন বর্তমান কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কেউ নির্বাচন করবে বলে শোনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে জেলা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার পদে তিনটি প্যানেল পৃথকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিন প্যানেলের কমান্ডার পদে মিরসরাইয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচএম আলাউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ রাশেদ, বর্তমান কমান্ডার সরোয়ার কামাল দুলুর নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবার কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়তে পারেন।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদের সাথে কথা বলতে চাইলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এখনও পর্যন্ত মোজাফ্ফর আহমদ কমান্ডার পদে একক প্রার্থী থাকলেও অন্যান্য পদে প্রার্থী থাকতে পারে। এসব পদে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জেলা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার পদপ্রার্থী এইচএম আলাউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেই আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবো। আমি কমান্ডার এবং আব্দুর রাজ্জাক ও বোরহান উদ্দিনকে ডেপুটি কমান্ডার করে পূর্ণপ্যানেলে নির্বাচন করবো। ভোটের পরিবেশ ভালো হবে বলেই আশা করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভোটে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। করলেও পরিণাম ভালো হয় না। কারণ, ঘাড়ত্যাড়া মানুষরাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল।’
আরেক জেলা কমান্ডার প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমদ রাশেদ পূর্বদেশকে বলেন, কমান্ডার পদে নির্বাচন করবো। আমার নেতৃত্বে পূর্ণপ্যানেল নিয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। মিরসরাই, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ এলাকার প্রচুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তারা আমার পক্ষে থাকবেন বলেই আমি মনে করছি। সবাই মিলেমিশে ভোট দিলে সুন্দর একটি কমান্ড উপহার দিব। আর যদি প্রতিপক্ষ ভোট বেশি পায় ওরাই জিতবে।
জেলা কমান্ডের কমান্ডার প্রার্থী ও বর্তমান কমান্ডার সরোয়ার কামাল দুলু বলেন, আমি কমান্ডার পদে নির্বাচন করবো। বাকি পদগুলোতেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্যানেল দিব। চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে অনেক কাজ করেছি। ২০০৮ সাল থেকে কাজ করছি। একসময় নামমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ছিল। এখন সেটিকে সাবলম্বী করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় অনেক বই করেছি। এখনো সরকার রাজাকারের তালিকা করছে। আমরা সেটি অনেক আগেই করেছি। আমরা যে কাজগুলো আগে করেছি সেগুলো এখন সরকার জাতীয় পর্যায়ে করছে। আশা করি আগের কাজের মূল্যায়ন করতেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের পাশে থাকবেন।