কমবয়সী ছেলে-মেয়েদের আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি

17

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, দেশে কমবয়সী তথা ৭ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত একবছরে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে এক সমীক্ষায় ওঠে এসেছে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য থেকে যা নির্ধারিত হয়। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন জরিপ চালিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে দেখা যায় স্কুল পর্যায়ে ৩৪০ জন, কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন, মাদরাসা ৫৪ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মাহুতি দিয়েছে। এমন অপমৃত্যু দেশের মানুষের কাম্য নয়। নানা অজুহাতে আবেগপ্রবণ হয়ে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। নানা কারণে প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ মানুষও আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ হতে আত্মহত্যা মহাপাপ। যে মানব সন্তান জীবনে পাপ-পুণ্যের শিক্ষা পায়নি তাদের জন্য ধর্মীয় বচন অকার্যকর। মানবজীবনে পাপ-পুণ্যের শিক্ষার বুনিয়াদি স্থান পরিবার তথা অভিভাবক। বর্তমান সময়ে বিশ্বে দরকারী শিক্ষা তথা জাগতিক সাফল্য অর্জনের শিক্ষা অর্জন করতে অধিকাংশ মা-বাবা সন্তানদের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। ঠিক যেন প্রতিটি সচেতন মা-বাবার লক্ষ্য ছেলে মেয়েদের প্রচলিত মূল্যমানে শিক্ষিত করে তোলা। প্রচলিত মূল্যমান বলতে ছেলে-মেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সচিব, বিসিএস অফিসার, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতের বড় কর্তাসহ জাগতিক অর্থ বিত্তের সাফল্য অর্জনের উপযোগী করে তোলা। বিবেক সম্পন্ন মানুষ বানানোর উদ্দেশ্যে বর্তমানে অধিকাংশ অভিভাবক উদাসীন। পবিত্র হাদিসে উল্লেখ আছে ‘প্রত্যেক মানুষের আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’ অভিভাবকদের ‘নিয়ত’ বা উদ্দেশ্য যদি সন্তানকে প্রকৃত মানুষ বানানো না হয়, তা হলে শিক্ষা অর্জনের পর সন্তানরা ডাক্তার প্রকৌশলী, সচিব, বিসিএস অফিসার, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, উকিল, বিচারকসহ সব হবে কিন্তু মানুষ হয়ে উঠবে না। দেশের প্রেক্ষাপটে সৎ ব্যক্তির চেয়ে অসৎ ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। দুর্নীতিবাজ, ঘুসখোর, সুদখোর, কালোবাজারি, গুদামজাতকারী, চাঁদাবাজ, মস্তান, দালাল, স্বার্থবাদী তথা জাগতিক সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিতে দেশ ভরে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সুশিক্ষিত নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। নৈতিক শিক্ষা এদেশে প্রায় শূন্যের কোটায়। মানসম্পন্ন শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যাও ভয়াবহভাবে কমে যাচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মূল্যবোধ তৈরি হচ্ছে না। এর কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা সুশিক্ষা এবং নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষার ধার ধারে না। শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট অর্জনে না পড়ে পাসের পক্ষে। সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে সাটিফিকেট দেয়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক গলৎগুলো সংশ্লিষ্টরা বিবেচনায় আনছেন না। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষা একটা পণ্যে পরিণত হয়েছে দেশে।অধিকাংশ অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠিয়ে দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ। সচেতন ও অসচেতন অভিভাবক সমাজ সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের কাছে ছেড়ে দেন। দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের সাথে থাকে তা অভিভাবকরা বিবেচনা করতে দেখা যায় না। নিজ সন্তানকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সততার শিক্ষা মা-বাবা তথা অভিভাবকদের দিতে হয়। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সিলেবাস নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সদাব্যস্ত। পরীক্ষা ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতিতে সাফল্য অর্জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মূল্য লক্ষ যেখানে, সেখানে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততা শিক্ষা দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না। যার কারণে প্রচলিত শিক্ষার মাধ্যমে সুশিক্ষিত, মূল্যবোধসম্পন্ন, আদর্শ মানবিক মানুষ দেশ পাচ্ছে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা পারিবারিক পরিমÐলে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নির্বিশেষে কোন পরিবারেই নেই বললেই চলে। প্রত্যেক ধর্ম মানব সন্তানকে নৈতিক ও মানবিক মানুষ হবার শিক্ষা দেয়। বর্তমান পৃথিবীতে আধুনিক শিক্ষায় ধর্মীয় মূল্যবোধের বালাই নেই। পারিবারিকভাবে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে পাপ-পুণ্যের পার্থক্য বোঝানো হলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।