কফিলউদ্দীন চৌধুরী (১৮৯৮-১৯৭২)

54

কফিলউদ্দীন চৌধুরী, আইনজীবী, রাজনীতিক। কফিলউদ্দীন চৌধুরীর জন্ম ১৮৯৮ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে। গ্রামেই তাঁর বাল্যজীবন কাটে। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি হাসাড়া কালীকিশোর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতায় বি.এ ও এল.এলবি পাস করে মুন্সিগঞ্জ শহরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। দু’তিন বছর পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং স্বল্পকালের মধ্যে একজন বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এসময় তিনি সমাজসেবা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডেও জড়িত হন।
তিনি শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কৃষকপ্রজা পার্টিতে যোগ দেন এবং এ দলের পক্ষে তৎকালীন ঢাকা জেলায় সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দেন। তিনি বিশ শতকের তিরিশের দশকে ঢাকা জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। জেলা মুসলিম লীগের সহসভাপতি পদে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি শেরেবাংলার কৃষক-শ্রমিক পার্টির সহসভাপতি নিযুক্ত হন। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হলে আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খান ও কৃষক শ্রমিক পার্টির কফিলউদ্দীন চৌধুরী ফ্রন্টের যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্রন্টের ২১ দফা প্রণয়নে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে কফিলউদ্দীন চৌধুরী শ্রীনগর-সিরাজদিখান এলাকা থেকে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। তিনি আইন, বন, সড়ক যোগাযোগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় এবং শোভাপুর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম হয়।
আইয়ুবীয় সামরিক শাসনকালে ১৯৫৮ সালে তাঁকে জেলে আটক এবং তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭০-এর সাধারন নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত তিনি আইন ব্যবসার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে মনোনিবেশ করেন। টঙ্গীবাড়ির ঋধাবং ঈড়ষফ ঝঃড়ৎধমব ওহংঁষধঃরড়হ ঋধপঃড়ৎু এবং ইৎড়ধফ ইঁৎষড়ঢ়ং ঔঁঃব গরষষ তাঁর গড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান। বলা যেতে পারে বিক্রমপুর অঞ্চলে কোল্ড স্টোরেজ গড়ে তোলায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
কফিলউদ্দীন চৌধুরী ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। একাত্তরের নভেম্বরের শেষভাগে তিনি হূদরোগে আক্রান্ত হন এবং ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে ৩১ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭২ সালের ১২ মে তাঁর মৃত্যু হয়।
তিনি সবসময় নিজ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য দিতেন এবং নিজ গ্রামে কফিলউদ্দীন চৌধুরী ইনস্টিটিউট নামে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সূত্র : বাংলাপিডিয়া