কপালের কৌতুক নিয়ে জবানী

100

 

কখন কার কবিতা পাঠক সমাজের চিত্তে গেথেঁ যায়, কবিতার পঙক্তিগুলো কাউকে কাউকে এতোাঁই প্রভাবিত করে যে পদ্মার ঢেউ হয়ে, দোলাচ্ছলে; কখনো কবিতা কাঁদায়,কখনো হাসায়,কখনোবা পরিপূর্ণ সুস্থ থাকতে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি কবিতাও মাঝে মাঝে আহার হয়ে যায়, প্রণয়ের পাওয়া না পাওয়াকে ঘিরে;
কাম, ক্ষোভ,ঘৃণা, অপমান, বিভিন্ন সূত্রে গাঁথা জীবন কবি শোয়াইব শাহরিয়ারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কপালের কৌতুক’… গ্রন্থটি হাতে পেয়ে আমি উদ্ভাসিত হয়েছি, কারণ আমার লেখালেখি জীবনে যত তরুণ প্রজন্মের কবিদের কবিতা পাঠ করেছি ‘কপালের কৌতুক’ গ্রন্থটি সব কবিতা ভালো না হলেও বেশ কয়েকটি কবিতা এতটাই অপ্রত্যাশিত হৃদয়ে মোচড় দিয়েছে, যেন সবকিছু পাঠকের জন্য নিজস্ব করে রচনা করেছে; এখানেই কবিদের পরম তৃপ্তি পাঠকের মণিকোঠায় একবার জায়গা পেলে অনন্তকাল বেঁচে থাকে কবি…
গ্রন্থটির ১০নং পৃষ্ঠায় ‘বোধ’ কবিতার কয়েকটি লাইন –
কুয়াশার চাদরে ঢুকে যাচ্ছে নদী। নদীর ভেতর ঢুকে যাচ্ছে দেহ।
দেহের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে নারী।
নারীর ভেতর ঢুকে যাচ্ছে পুরুষ।
পুরুষের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে লোভ।’
প্রতিটা স্তরের পরতে পরতে শব্দের চমৎকার ব্যবহার , কবির সরল উক্তি, সহজ করে পাঠককে বুঝাতে চেষ্টা করেছে; তরুণ কবি হলেও কবিতার মুনশিয়ানা দেখাতে কোন কমতি নেই, ৩৬নং পৃষ্ঠার ‘বিচার’ কবিতায় লেখেছে-
‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে- আমাকে হত্যার বিচার চাইলাম।
রাষ্ট্রপতি হেসে বললে’-আপনি তো ঢের জীবিত!
তখন আমি আমার হৃদপিন্ডটি রাষ্ট্রপতির হাতে দিলাম;
রাষ্ট্রপতি বললেন – ‘তাইতো!
এখন আপনাকে আত্মহত্যার দায়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলো-
সাথে আপনার জান্নাতবাসী প্রেমিকাকেও!’
কবি শোয়াইব শাহরিয়ার ৪৫নং পৃষ্ঠার ‘সন্ধান’ কবিতায় বলেছেন –
‘ধর্ম ও ইশ্বরের খোঁজে আমি যখন মৃত্যুমুখী
তখন একজন চেঁচিয়ে বলে উঠলো –
‘ভাইজান, পৃথিবীতে কোনো ইশ্বর নেই!
আপনি বরং প্রেমিকা খুঁজুন’
আমি ওনার কথামতো প্রেমিকা খুঁজতে গিয়ে
ধর্ম ও ঈশ্বর দুটিই পেলাম!’
এখানে কবি স্পষ্ট করে বলেছেন, সত্যিকারের ইশ্বর মানুষের ভালোবাসায়
অন্তর্নিহিত; ‘কপালের কৌতুক’ কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের হৃদয়ে গেঁথে থাকুক পরম্পরা হয়ে এই কামনা….