কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর পুলিশ

126

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ‘অবৈধ লেনদেন’ নিয়ে কঠোর অবস্থানে পুলিশ সদর দপ্তর। এনিয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ অনৈতিক কর্মকাÐে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে। চট্টগ্রামেও স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা। নিয়োগ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তারও করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আগামী ৫ বছরে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের অংশ হিসেবে এবার ৯৬৮০ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৬৮০০ জন পুরুষ ও ২৮৮০ জন নারী। প্রশিক্ষণ শেষে প্রার্থীদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রার্থীদের তিন ধাপে (শারীরিক, লিখিত এবং ‘মনস্তাত্তি¡ক ও মৌখিক’ পরীক্ষা) বাছাই করা হবে।
জানা যায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট রেঞ্জের অধীনে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ লাইনস ময়দানে শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শনিবার থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২৪, ২৬, ২৯ জুন ও ১, ৩ জুলাই সরাসরি শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা (দৌড়, রোপিং, জাম্পিং ইত্যাদি) অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিতদের ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ পরীক্ষায় ৪৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া প্রাার্থীরা সর্বশেষ ধাপের পরীক্ষা (মনস্তাত্তি¡ক ও মৌখিক, ২০ নম্বর) দিতে পারবেন।
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠে বেশকবার। প্রতি জনের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের অভিযোগ উঠে। এক শ্রেণির দালাল ও প্রতারক চক্র, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও কিছু পুলিশ সদসের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ছিল। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের তদবিরও ছিল। কিন্তু এবার পুলিশের আইজি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগে তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলা পুরিশ সুপারদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশও দিয়েছেন। কোন দালাল বা প্রতারক চক্র যাতে অবৈধ লেনদেনে জড়িত হতে না পারে সেদিকে নজরদারি করার জন্য বলেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ১০৮৮ জন কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে সাধারণ কোটায় ১২২ জন। এদের মধ্যে ১০৪ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। এছাড়া বিশেষ কোটায় অপূরণকৃত পদসংখ্যা ৯৬৬টি। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৬৩ জন ও নারী ২০৩ জন। আগামী ১ জুলাই হালিশহর পুলিশ লাইনস মাঠে শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের লিখিত পরীক্ষা পরদিন ২ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ৬ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও একইদিন মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৭ জুলাই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, কনস্টেবল নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে হবে। কারো অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৩ টাকা মূল্যের একটি ফরম ও ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করলেই মিলবে চাকরি। টাকার বিনিময়ে কারো চাকরি হবে না। তিনি প্রতারক ও দালালের খপ্পরে না পড়ার অনুরোধ জানান। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রকে ধরতে আমরা নানা কৌশল নিয়েছি। কেউ অনৈতিকতায় জড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে।
উর্ধ্বন কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিতে ঘুষ ও তদবিরবিহীন চাকরির দৃষ্টান্ত স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই অনেক জেলায় এসপিদের উদ্যোগে মাইকিংসহ নানা প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চাকরির নামে ঘুষ লেনদেন হলে গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এমনকি চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়কারী দালাল ও প্রতারকদের ধরতে চাকরিপ্রার্থী সাজিয়ে ফাঁদ পাতা হচ্ছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত তুলনামূলক সৎ অফিসারদের বিভিন্ন জেলায় এসপি হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। ১৩ জুন এমন ২১ জন এসপিকে বদলি বা পদায়ন করা হয়েছে। চলতি মাসেই আরও বেশ কিছু জেলার পুলিশ সুপারের মধ্যে রদবদল করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, অন্যবার স্থানীয় এমপিরাও তালিকা ধরিয়ে দিতেন। এবার সে নিয়ম রাখা হয়নি। কারো কাছ থেকে তালিকা না নিতে এবং সুপারিশ না শুনতে সদর দপ্তর থেকে পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামেও নিয়োগ নিয়ে অবৈধ লেনদেনে জড়িত না হওয়ার জন্য জেলা পুলিশ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ অর্থ চাইলে পুলিশ সুপার বা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের অবহিত করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।