কতটা লাভ বাংলাদেশের সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি শ্রমিকের ঢেউ

19

সাইফুল ইসলাম তালুকদার

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার নতুন করে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিজিট ভিসা উন্মুক্ত করেছে। এই সুযোগে প্রচুর বাংলাদেশি মরুর দেশটিতে ভ্রমণ করছেন। গত ছয় মাসে লক্ষাধিক বাংলাদেশি এই মরুর দেশে এসেছেন। অনেকে ভ্রমণ ভিসায় এসে আবার দেশে ফিরে গেছেন। তবে, এদের অধিকাংশই এদেশে থেকে গেছেন।
বর্তমানে আরব আমিরাতে প্রায় ৮ লক্ষ বাংলাদেশি কাজ করছেন। তবে, বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য সরাসরি ওয়ার্ক পারমিট চালু নেই। এখন একমাত্র সুযোগ ভিজিট ভিসা। আর ভিজিট ভিসা তিন মাস এবং এক মাস মেয়াদি এই দুই ক্যাটাগরিতে দিচ্ছে।
আমিরাত সরকার ভিজিট ভিসায় আমিরাতে আসার পর ওয়ার্ক পারমিট গ্রহণের সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে ভিজিট ভিসায় এসে ওয়ার্ক পারমিট যোগাড় করছেন। তবে, এদের অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। এতে, তারা মূল ধারায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেনা।
বিশেষ করে ভারতীয়রা অন্যান্য দেশের মত চেষ্টা করে আরব আমিরাতেও দক্ষ শ্রমিক পাঠাচ্ছে। এতে, ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি মূল ধারার চাকরিগুলোতে ভারতীয়দের আধিপত্য বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছে।
স¤প্রতি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জন্য আরব আমিরাতের ভিজিট ভিসা বন্ধ করা হয়েছে। তবে, বাংলাদেশের জন্য ভিজিট ভিসা চালু হলেও অদক্ষ শ্রমিকের কারণে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। এই দিকটায় সরকার নজর দিতে পারেন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া, দুবাই ও লিবিয়া হয়ে ইউরোপ যাওয়ার রুট হিসেবে অনেকে এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু আদম পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে অনেক তরুণ ও কিশোরকে এই রুট দিয়ে পাচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এর আগে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে অনেক প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশি ছিলো বলেও সংবাদ প্রচার হয়। এতে, বিশে^র কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মত অনেকের।
এখানে বসবাসরত অনেক পুরনো বাংলাদেশি আছেন যারা নিজেদের কর্মগুণে প্রতিষ্ঠিত। এমন কিছু বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীর মতে, এই দেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল পাঠালে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি রেমিটেন্সের প্রবাহও বাড়বে আনুপাতিক হারে।
এছাড়া, চলতি বছরের অক্টোবরে দুবাই এক্সপো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে, প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। এজন্য আরব আমিরাত সরকার প্রচুর ভিজিট ভিসায় লোককে এই দেশে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে।
এটা আমরা সবাই জানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমরা স্বাধীনতার পর থেকেই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছি। মাঝে কয়েক বছর বাদে রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের জন্য লোভনীয় জায়গা। সুতরাং এদিক থেকে আমাদের কোন বিষয়ে ন্যূনতম ছাড় দেয়া উচিত হবে না।
আগেই বলেছি, আরব আমিরাত সরকার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে টুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি আরব আমিরাতের সুদৃষ্টি সুন্দরভাবে হ্যান্ডেলিং করতে হবে। সরকারের দূরদর্শী ভূমিকায় ভবিষ্যতে আমাদের শ্রমবাজার দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক