কঠোর লকডাউনেও থেমে নেই ঈদের শপিং

60

আগামীকাল ২৫ এপ্রিল থেকে দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখতে পারবে। কিন্তু নগরীর কিছু ব্যবসায়ীর যেন তর সইছে না। গত কয়েকদিন ধরেই তারা দোকান খুলছেন। তাল মিলিয়ে কিছু ক্রেতাকেও কেনাকাটা করতে ভিড় করতে দেখা গেছে। সেই সময় দোকানদারেরা সাঁটার অর্ধেক বন্ধ করে দোকান চালাতো। কোথাও কোথাও ক্রেতাকে দোকানে ঢুকিয়ে বন্ধ করা হতো সাঁটার।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজার ঘুরে এসব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে আর লুকোচুরি করে নয়; প্রকাশ্যেই দোকান খোলা রাখা হচ্ছে সেখানে। ক্রেতারাও ঢুকছেন নির্ভয়ে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবারও সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেয়াজউদ্দিন ও টেরিবাজারের অধিকাংশ দোকানের দরজা পুরোপুরি কিংবা আংশিক খোলা রাখতে দেখা গেছে।
তবে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, দোকানের কর্মচারীরা সময় পার করার জন্য দোকান খোলা রেখেছেন। তবে কোনো বিক্রি হচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তামাকুমন্ডি লেইন, বাহার লেইন, আরএস রোডসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা দোকানের অর্ধেক সাঁটার খুলে ভেতরে আলোকসজ্জা করে নিজেদের পণ্য বিক্রি করছেন। অথচ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপর দেখা যায়নি। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত পণ্য বিক্রিতে। এছাড়াও তামাকুমুন্ডি লেইনের আব্দুল লতিফ সুপার মার্কেটের কিছু দোকান খোলা ছিল। একই অবস্থা ছিল নগরীর টেরিবাজারেরও।
নগরের কতোয়ালী থানা পুলিশ বলছে, আমাদের টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং সব জায়গায় মাইকিং করছে। কোনো দোকান খোলা পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন জানান, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে আসছি। তারা আমাদের সাথে চোর-পুলিশ খেলছে। আমরা তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে আসছি সেই প্রথম দিন থেকেই। এরপর থেকে আমাদের টিম অভিযানে গেলে দোকান বন্ধ করে রাখে। সেখান থেকে চলে আসলে আবার দোকান খুলে দেন। তারপরেও আমাদের কয়েকটি টিম পর্যবেক্ষণে রয়েছে। প্রতি আধাঘণ্টা পর পর মার্কেট থেকে ঘুরে আসছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, গ্রামীণ উপজেলা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে পাইকারি দামে কাপড়-চোপড় নিতে আসছেন। তার পাশাপাশি শহরের অনেকে শপিং করার জন্য আসছেন। আমাদেরকে সওদাগরে (ব্যবসায়ী) আসতে বলেছে বলেই গ্রাম থেকে এসেছি, তা না হলে গ্রামেই থাকতাম।
গাড়ি বন্ধ থাকার পর তারা কিভাবে আসছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা দূর থেকে আসছেন তারা খুব ভোরে ভোরে শহরে প্রবেশ করেন, যাতে পুলিশের হাতে না পড়ে। তারা বাজার করে সন্ধ্যার সময় চলে যান।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের ভাষ্যমতে, ঈদের আগ পর্যন্ত সকল মার্কেট বন্ধ থাকবে। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিলেও মানছেন না ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, যে বাজারে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে পোশাক, ক্রোকারিজসহ সব প্রয়োজনীয় পণ্যের বেচাকেনা হয়। যেখানে রয়েছে কয়েক হাজার পাইকারি ও খুচরা দোকান। এই বাজারের পুরো ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চট্টগ্রামে কাপড়ের পাইকারি বাজার টেরিবাজারসহ বড় বড় বিপনি বিতানগুলোতে একচেটিয়া ব্যবসা সাতকানিয়ার লোকজনের।
আরও জানা গেছে, বড়বড় দোকানের মালিকরা টেলিফোনে, মেসেঞ্জারে তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের আগেভাগে দোকান খোলার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। ঈদের ভিড় এড়াতে তাদের আগেই কেনাকাটা করার পরামর্শ দিয়েছে। অনেক ক্রেতা পছন্দের দোকান মালিকদের পরামর্শ শুনে কেনাকাটা শুরু করেছেন।
রিয়াজউদ্দিনবাজার ও টেরিবাজারের মতো মার্কেট কিভাবে খোলা রাখছেন- প্রশ্ন সাধারণের মাঝে।
নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রামিমা আফরোজা পায়েল বলেন, সরকার টাইম লিমিট না করে দিলে ভালো হতো। এখন টাইম লিমিট করে দেয়ার কারণে ভীড় সামলানো যাবে না। টাইম লিমিট না করলে যে যার সুবিধামত শপিং করতে পারতো।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, রাস্তায় কোনো গণপরিবহন চলাচল না করায় কোনো ব্যবসা হচ্ছে না। দোকানের কর্মচারীরা এমনিতে দোকান খুলে বসে সময় পার করছে। দোকান খোলা রাখলে তো হবে না, যদি কোনো কাস্টমার না থাকে। আমিও মাঝে মাঝে দোকানে বসি, বাসায় বসে থেকে কি করবো। সাধারণ মানুষ জান বাঁচানোর তালে আছে, শপিং করবে কেমনে?
তামাকুমুন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার আওতাধীন ১১০টি মার্কেট বন্ধ রাখা হয়েছে। যারা দোকান খুলছে, তারা আমাদের কথার অবাধ্য হয়ে দোকান খুলছেন। আর আমার তামাকুমুন্ডি লেইন বন্ধ রয়েছে। কেউ দোকান খুললে হয়তো চুরি করে খুলেছে। সে বিষয়ে সমিতির কেউ দায়ভার নিবে না।
মােের্কট খোলা থাকার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আপনি ভুল দেখেছেন এবং আরএস রোডটি আমাদের সংগঠনের আওতাভুক্ত নয়। তাদের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। সরকারের নির্দেশনামত বন্ধ রয়েছে, পুনরায় নির্দেশনা পেলে দোকান চালু হবে।