কঠোর বিধিনিষেধ যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি

4

 

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ, যা বহাল থাকবে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। ঈদের আগে মানুষের চলাচল ও পশুরহাটে কেনাবেচার বিষয়টি বিবেচনায় এনে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোররাত পর্যন্ত বিধি-নিষেধ শিথিল করেছিল সরকার। এই সুযোগ নিয়ে অনেকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামে গেছেন। চলমান বিধি-নিষেধ বহাল না রাখলে করোনার সংক্রমণ যেমন বাড়বে, তেমনি দীর্ঘ হবে শবদেহের মিছিল।
চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন কোনো শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না। কোভিড-১৯ রোগীর জন্য হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং আইসিইউ এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। একটি শয্যার জন্য স্বজনরা এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটছেন। শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। বিগত লকডাউনে গার্মেন্টস খোলা থাকলেও এবার বন্ধ রাখা হয়েছে গার্মেন্টস, শিল্প-কলকারখানাসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। সরকারি কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে দাপ্তরিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ যথাযথ বাস্তবায়ন করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। আমরা বিগত দিনের মতো নানান অজুহাতে মানুষের বাইরে অযথা ঘোরাঘুরি দেখতে চাই না, দেখতে চাই না হাসপাতালে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীর কষ্ট। আমরা মনে করি, এই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও করোনার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা পরিস্থিতিতে যেমন বিপর্যস্ত বিশ্ব, তেমনি দেশেও করোনার বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনীহা প্রকাশ অত্যন্ত দুঃখজনক। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করলে করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে দেশ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। করোনার সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি সেই মোতাবেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর আগে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছিল, করোনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে দীর্ঘায়িত করা হলেও এর কাক্সিক্ষত সাফল্য অধরাই রয়ে গেছে। বিধিনিষেধ মানার ক্ষেত্রে সচেতন মানুষের মধ্যেও একপর্যায়ে ব্যাপক অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। ফলে এটি যেন উপেক্ষিত না হয় তা বিবেচনায় নিতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, বিশ্বে করোনা মহামারির তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে এবং বিশ্ববাসী এখন এর প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এবারের ঢেউয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হতে পারে অতি সংক্রামক ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’। ফলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিকল্প নেই। চলমান বিধিনিষেধে স্বল্প আয়ের মানুষ যেন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে, সেই বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, বর্তমানে সরকারের হাতে এক কোটির বেশি করোনার টিকা রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই আরও দুই কোটি টিকা আসবে। চীন থেকে তিন কোটি, রাশিয়া থেকে সাত কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসনের সাত কোটি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটিসহ আগামী বছরের শুরুর মধ্যেই সরকারের হাতে প্রায় ২১ কোটি টিকা চলে আসবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হবে সরকার, যা সুসংবাদ।