কক্সবাজার সৈকতে মৃত্যুর মিছিল ৭ বছরে ৩৪ জনের প্রাণহানি

8

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র তাহসিনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। প্রায় ৯ ঘণ্টা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট খোঁজাখুঁজির পর গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে সৈকতের শৈবাল পয়েন্টে বিচকর্মী ও লাইফ গার্ডের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে ডুবে এবং ভেসে গিয়ে শিক্ষার্থীসহ সলিল সমাধি ঘটেছে ৬ জনের। এসময়ে উদ্ধার হয়েছে ৮০ জন। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত সৈকতে গোসল করতে নেমে ডুবে এবং ভেসে গিয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে লাইফগার্ড কর্মীরা জীবিত উদ্ধার করেছে ৪৬৫ জনকে।
মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সাগরে গোসলে নামার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যত তা কোন কাজে আসছে না। যথারীতি সৈকতে পর্যটক ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সরেজমিন এবং পর্যটকসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে সৈকত উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অনেকদিন পর সমুদ্রস্নান ও বালিয়াড়িতে ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে দলে দলে কক্সবাজার ছুটে আসেন পর্যটকরা। তারা আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকেন। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায় এদিক-ওদিক। ওয়াটার বাইক, স্পিডবোট ও সাঁতারো টায়ারে চড়ে মনের সজীবতা ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত সময় কাটান। কিন্তু বেশি আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে মনের অজান্তে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হন অনেক পর্যটক। সূত্রমতে, গতকাল কক্সবাজার সৈকতে গোসলে নেমে স্রোতের টানে ভেসে যায় ৩ বন্ধু। তিন বন্ধুর মধ্যে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র তাহসিনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে দুই জনকে। সাগরে সলিলসমাধি হওয়া তাহসিন কুমিল্লা সদরের কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। উদ্ধার হওয়া অপর দুই শিক্ষার্থী হলেন ফয়সাল ও রিফাত। গত ১১ অক্টোবর মোহাম্মদ সুমন নামের অপর এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। তিনি ঢাকার বংশালের নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা।
সাগরে গোসল করতে নামা পর্যটকদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত লাইফগার্ডকর্মী মাহবুবুল আলম জানান, পর্যটকদের অসাবধনতা ও লাইফগার্ডের দেয়া নির্দেশনা যথা জোয়ার-ভাঁটার সময়সূচি, হুশিয়ারি বাঁশি, বিভিন্ন সংকেত ও লাল পতাকার সংকেত অমান্য করার কারণে বারংবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।
সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যুর ব্যাপারে লাইফগার্ডকর্মী শাহাদাত হোসেন বলেন, সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে সমুদ্রের অবস্থা যে রকম ছিল এখন ঠিক সে রকম নেই। প্রাকৃতিক নিয়মে সাগরের তলদেশ দিন দিন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বালু সরে গিয়ে সাগরে এখন বড় বড় গুপ্তখালের সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ (পর্যটন সেল) বলেন, সমুদ্রের পানিতে নামার আগে ১০টি নির্দেশনা মানতে হবে পর্যটকসহ সবাইকে; যা আমরা সতর্ক বার্তা হিসেবে নির্ণয় করেছি। এ নির্দেশনা সৈকতের উল্লেখযোগ্য পয়েন্টে লাগানো হয়েছে। পর্যটকদের জানা উচিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাইফগার্ড আছে। এখানে সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। কোন চিহ্ন দিয়ে কি অর্থ প্রকাশ পায়, লাল পতাকার অর্থ কী ইত্যাদি। তিনি বলেন, আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসেন তারা অনেক সময় সিগন্যালগুলো খেয়াল করতে পারেন না। তাদের অবগতির জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য এখানকার বিচকর্মীরা সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছেন।