কক্সবাজার সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনে ভক্তের শেষ আরাধনা

14

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ আর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয়েছে দেবী দুর্গাকে। প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে বুধবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে বসে লাখো মানুষের মিলনমেলা। ওই মিলনমেলায় সামিল হন দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও।
পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তৈরিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে সামিল হন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। অশ্রুসজল চোখে আরও একটি বছরের জন্য দেবীকে বিদায় জানান সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ। আগামী বছর দেবীর পুনরাগমণের আশায় বুক বাঁধেন তারা। দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামীগৃহে গমণের পাঁচ দিন পরেই লক্ষীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি।
এ মিলনোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল এমপি।
জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট বাবু উজ্জল করের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মাফুজুল ইসলাম, র‌্যাব ১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, এডভোকেট রনজিত দাশ প্রমুখ।
গতকাল বুধবার বিকালে দেখতে দেখতে সকল আনন্দ ছাপিয়ে বেজে উঠে বিষাদের সানাই। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দুর্গতিনাশিনীর মর্তে আগমন, দশমীবিহিত পূজা শেষে কৈলাস যাত্রা তার। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে সকাল থেকেই একে একে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে ট্রাকে তোলা হয় প্রতিমাগুলো।
এ সময় শহরের প্রতিটি পূজা মন্ডপে বেজে উঠে বিদায়ের সুর। এরপর ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সঙ্গীতের মূর্ছনায় নেচে গেয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশে ছুটে চলে প্রতিমাবাহী ট্রাকগুলো। পথে পথে বাড়তে থাকে শোভাযাত্রার কলেবর। শোভাযাত্রা শেষে সৈকতে একে একে সাজিয়ে রাখা হয় প্রতিমাগুলো। মাইকে ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠে শংখ, উলুধ্বনি, বাদ্যের ঘণ্টা। কণ্ঠে ‘জয় দুর্গা মায়ের জয়’ আর চোখে জল নিয়ে একের পর এক সাগরে উত্তাল টেউয়ে ভাসানো হয় প্রতিমা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন হলেও সৈকতে নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের মিলন ঘটে।
আয়োজকরা জানান, শুধুমাত্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ৮০টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সৈকতের বালিয়াড়িতে সরেজমিন দেখা যায়, ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও সকল ধর্মের মানুষ বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে সামিল হয়েছেন। সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভ‚মিজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক দৃষ্টান্ত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব নির্বিঘ্ন করতে আগে থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয় পুরো কক্সবাজার জেলায়। তাছাড়া প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ভক্তদের ভোগান্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পুরো এলাকায় জোরদার ছিলো প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।