কক্সবাজার পর্যটনমেলা দেশের পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করতে সরকারি উদ্যোগ জরুরি

14

 

চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বেশি পর্যটন স্পট। মানুষ সার্বক্ষণিক কাজ কর্মে লিপ্ত থেকে জীবন কাটাতে পারে না। প্রবাদ আছে ‘অবসর কাজের অঙ্গ এক সূত্রে গাঁথা’ অবসর, অবকাশ, বিনোদন জীবনের অপরিহার্য অংশ। মানব জীবনে মৌলিক ও জৈবিক চাহিদার পাশাপাশি মনকে সতেজ রাখার জন্য অবকাশ ও বিনোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যে ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিশে^ পর্যটন শিল্পের উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে খুবই গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সে তুলনায় আমাদের দেশ অনেকখানি পিছিয়ে। অথচ আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের দেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ। নদী, সাগর, পাহাড় সমতল, জলাশয় ভরা এদেশে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। রয়েছে দেশে একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবন, রাঙামাটির বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে বিশাল পর্যটন এলাকা। খাগড়াছড়ি-বান্দরবানে পাহাড়ি প্রকৃতির লীলাখেলা, ঝর্ণা, হ্রদ ও আরোকত কি। তা ছাড়া সীতাকুন্ড-মিরসরাইয়ে সমুদ্র উপকূল ও পাহাড়। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, আনোয়ারা পারকী সমাদ্র সৈকত, বাঁশখালীর পরিচ্ছন্ন ৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত। সিলেট ও চট্টগ্রামে রয়েছে সবুজের উত্তাল ঢেউভরা দৃষ্টিনন্দন চা-বাগান। দেশের প্রকৃতির আকর্ষণীয় এসব এলাকায় দেশ বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করে সারা বছর। সারা সপ্তাহব্যাপী কাজ কর্মকরে শুক্র ও শনিবার কিংবা বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে দেশ বিদেশের ভ্রমণ বিলাসী ও প্রকৃতি প্রেমিক নর-নারী দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমÐিত স্থানে বেড়াতে যায়। বিদেশে পর্যটন শিল্পখাত হতে প্রচুর অর্থ আয় হয়। সে তুলনায় আমাদের দেশের পর্যটন শিল্প অনেকখানি পিছিয়ে। দেশের বৃহত্তর চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের যে বিশাল সম্ভাবনা তাতে আশানুরূপ আয় হচ্ছেনা দেশের। এর মূল কারণ দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা পর্যটনখাতে সরকারি বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়, তবু দেশের বহু পর্যটন স্পটের উন্নয়ন আশানুরূপ নয়। বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলোতে যেতে নানা জটিলতার সম্মুখিন হতে হয় পর্যটকদের। সিডিএ’র তত্ত¡াবধানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় আনোয়ারা পারকী সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন হয়নি। তাছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁশখালী সমুদ্র সৈকতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বললেও তেমন আতুক্তি হয়না।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন হতে জানা যায় আজ ২৭ সেপ্টেম্বর হতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা বসেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এর আয়োজক। সমুদ্র সৈকতের প্রতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যটন মেলা খুবই ভূমিকা রাখবে। ২৩০টি স্টল সমৃদ্ধ এ পর্যটন মেলা হতে পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র পর্যটকরা ক্রয় করতে পারবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন মেলা, সিডিএ’র উদ্যোগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন দেশের পর্যটন শিল্পে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এরকম বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ ও উন্নয়ন দেশের পর্যটন শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে খুবই অপ্রতুল। কক্সবাজার বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত হলেও এর আন্তর্জাতিকতা ও পর্যটন সুবিধা সন্তোষজনক নয়। পর্যটনবান্ধব পরিবেশ, নিরাপত্তা, সৌন্দর্য বর্ধন ইত্যাদি কর্মকান্ড দেশের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক ভূমিকা জরুরি। কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সকল পর্যটন স্পটে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলে পর্যটনমেলা ছাড়াই দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে দর্শনার্থীর ভিড় লেগে থাকবে। বিদেশিরা ছুটে আসবে এখানে অবকাশ যাপন করতে। দেশের সকল পর্যটন স্পটের উন্নয়ন করে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ দেশের পর্যটন স্পটসমূহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করে তুলবে এ ধারণা পর্যটন বিশেষজ্ঞদের।