কক্সবাজারে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর

13

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে উচ্চআদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে পলিথিন/প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনকারী সকল কারখানা এবং ১ বছরের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় পরিবহন, বিক্রয়, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ বন্ধসহ একই সময়ের মধ্যে সকল হোটেল, মোটেল এবং রেস্টুরেন্টে ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ আইনের বাস্তবায়ন আরো কঠোর করা হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে ৩ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা। গতকাল শনিবার দুপুরে সামুদ্রিক জীবন এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর ‘প্লাস্টিক/সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক এর দূষণ নিয়ন্ত্রণে অংশীজনদের নিয়ে কর্মশালায়’ এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পর্যটন শহরের অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা যাতে সাগর এবং সুনীল আকাশকে দূষিত না করে। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে ভাবতে হবে। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় থাকা চাই।’
ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হলো পরিবেশ সুরক্ষা। তার জন্য উপকূলীয় এলাকায় তথা সমগ্র কক্সবাজারে পলিথিন/সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে জেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা দরকার।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও কঠোর এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ২০১৫ সাল থেকে মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত ২৮৯৭ অভিযানে ৫৯৫৪টি মামলায় ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদÐে দÐিত হয়েছে ৯১ জন। কোভিডকালীন শুধুমাত্র ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্লাস্টিক/পলিথিনের বিরুদ্ধে ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৪১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী আবু তাহের।
প্লাস্টিক/সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম তারিকুল আলম।
তিনি বলেন, ‘পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক ১২৪ টন থেকে ঋতুভেদে ২০০ টন পর্যন্ত আবর্জনা সংগৃহীত হয়। এসব আবর্জনার প্রায় ৩০ শতাংশ রিসাইকেলে যায়।’
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে ৭ একর জমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান একেএম তারিকুল আলম।
বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ‘প্লাস্টিক অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নের গুরুত্বের উপর আলোচনা করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্ট স্পেশালিস্ট বুশরা নিশাত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক দূষণ রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে পর্যটন স্পটে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে বিভিন্ন পেশার নাগরিক, সরকার, বেসরকারি খাতসহ তরুণদের প্রতিশ্রæতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্লাস্টিক/সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক দূষণের উপর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবস্থাপনা) ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
বাংলাদেশে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সামুদ্রিক লিটার প্রতিরোধের সমন্বিত পদ্ধতির উপর তথ্য দেন ইউনিডো বাংলাদেশের পরিচালক ড. জাকিউজ্জামান।
কর্মশালায় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মুফিদুল আলম, সদর দপ্তরের পরিচালক (ওয়েস্ট এন্ড কেমিক্যাল) রাজিনআরা বেগম, সোলাইমান হায়দার, কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমদ, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম, পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ, কোস্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষে তানজির রনিসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত পেশ করেন।