কক্সবাজারে প্রশাসন একাডেমির ৭০০ একর বনভূমি বরাদ্দ স্থগিত

19

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রশাসন একাডেমির নামে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন শুকনা ছড়িতে ৭০০ একর বনভূমির লিজ অবশেষে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। গত ১১ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার অবকাশকালীন বেঞ্চ এ অদেশ দেন। সেই সাথে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বনসচিব, ভূমি সচিবের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে জবাব দিতে রুল নিশি জারি করেছেন বিচারক। প্রশাসন একাডেমির নাম ব্যবহার করে নিজেদের জন্য পরিবেশ-প্রকৃতির অভয়ারণ্যের ৭০০ একর জমি লিজ নেওয়া হয়। তথ্য গোপন করে নামমাত্র টাকায় সবুজ প্রকৃতি লিজের ঘটনা প্রকাশ হলে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কক্সবাজার নাগরিক ফোরামসহ বিভিন্ন পারবিশে ও সামজিক সংগঠন সোচ্চার হয়। তারা প্রতিবাদ গড়ে তুলে। লিজ বাতিল চেয়ে রাজপথে সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। জেলাব্যাপি গণস্বাক্ষর শুরু করেছে বাপা। কর্মসূচি এখনো চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের পক্ষে এড. একেএম মনিরুজ্জামান কবির হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন। যার নং-৭৬০১/২১। রিটের শুনানি শেষ গঠিত বেঞ্চের বিচারক বিষয়টি আমলে নিয়ে উল্লেখিত আদেশ দেন। আদেশ পাওয়ার পর কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারের সম্পদ, জনগনের সম্পদ। জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য কক্সবাজারের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। এ মাটির সন্তানেরা তাদের প্রিয় ভূমিকে খুব ভালোবাসে। ৭০০ একর রক্ষার জন্য যারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, গণস্বাক্ষর করেছেন, সবাইকে নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আ ন ম হেলাল উদ্দিন। সঠিকতথ্য গোপন রেখে সরকারের যারা এ সংরক্ষিত বনভুমির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে বনভূমি লিজ নিয়ে প্রতারণা ও সত্য গোপন করা হয়েছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না বলেও জানান আ ন ম হেলাল উদ্দিন। সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার একে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বনবিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এ ঝিলংজা বনভূমি। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এ বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার কেবল বনবিভাগের। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। এ কারণে বনবিভাগ থেকে এ ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয় উল্লেখ করে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দপত্রে দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনভূমিকে অকৃষি খাসজমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বলেছে, বরাদ্দ দেওয়া জমির ৪০০ একর পাহাড় ও ৩০০ একর ছড়া বা ঝরনা। তারা জমির মূল্য ধরেছে ৪ হাজার ৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু একাডেমির জন্য প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয় এলাকাটিকে অকৃষি খাসজমি দেখালে বন বিভাগ বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে আপত্তি তোলে। তারা জানান, বন আইন অনুযায়ী এ জমি বনবিভাগের আওতাধীন ‘রক্ষিত বনভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত। এ জমি বন্দোবস্তযোগ্য নয় বলে একটি চিঠিও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরকে দেয় বনবিভাগ। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে আছে। সরকারের এ বিভাগ বিসিএস বন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দ্বারা পরিচালিত। কক্সবাজার ভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়েস এ বনভূমি ইজারা না দেওয়ার দাবি জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল। তাতে বলা হয়, সেখানে ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এরমধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতি। এছাড়া বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি। আদালতের রায়কে সময়োপযোগী মন্তব্য করে সাধুবাদ জানিয়েছেন ইয়েসের প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন। বাপা কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, প্রশাসন একাডেমির জন্য ৭০০ একর জমি কোন দরকার নেই। তাও সংরক্ষিত বনভূমি। সবুজ প্রকৃতি বিনষ্ট করে কোন স্থাপনা হতে পারে না। ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে যারা প্রকৃতির ফুসফুস ধ্বংস করতে চায় তাদের ক্ষমা করা যায় না। আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে।