কক্সবাজারে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সার্ফিং

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন শহর এখন আলাদা করে পরিচিতি পাচ্ছে সার্ফিংয়ের জন্য। বর্তমানে সেখানে প্রশিক্ষু নিচ্ছে বেশ কিছু সার্ফার। তাদের মধ্যে আছে মেয়েরাও। আর এরাই এই খাতকে আরও সম্ভাবনাময় করে তুলবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে বহু আগে থেকেই সার্ফিং চালু থাকলেও বাংলাদেশে সার্ফিংয়ের শুরুটা ২০০০ সালে। সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সমুদ্র সৈকত ইতোমধ্যে আলাদা করে নাম করলেও এবার এই সেক্টরে এগোতে চাইছে কক্সবাজারও। দেরিতে হলেও এখন বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আসা বিদেশি পর্যটকসহ অন্যদের ঝোঁক এখন সার্ফিংকে ঘিরে।
সার্ফিংয়ের দিক থেকে কক্সবাজার মূলত এখনও নতুনের পর্যায়ে। তবে এতে বেশ সম্ভাবনাও দেখছেন সার্ফাররা। আবার আছে কিছু সমস্যাও। বিশেষ করে সমুদ্রে ময়লা-আবর্জনা বেশি থাকায় ঢেউ কম বলে মন্তব্য সার্ফারদের। তবে মার্চ-এপ্রিল সময়টা কক্সবাজার সার্ফিংয়ের উপযুক্ত সময় বলেও জানান তারা। এছাড়া এই ক্ষেত্রটিকে আরও যুগোপযোগী করে তুলতে সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সার্ফিং নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা। ‘ন ডরাই’ নামের এই চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে স্টার সিনেপ্লেক্স। একজন নারী সার্ফারের জীবন থেকে উৎসাহিত হয়ে এ ছবির গল্প। আর এই চলচ্চিত্র মুক্তির পর থেকে সার্ফিংয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সার্ফাররা।
সিনেমাটির সঙ্গে মিল রেখে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ‘ন ডরাই সার্ফ ক্লাব’। সায়মন বিচ রিসোর্টের এ ক্লাবটি উদ্যোগ নিচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সার্ফিংকে আরও এগিয়ে নিতে এবং সবার সামনে তুলে ধরার। গর্জন তোলা সমুদ্রের ঢেউ বেয়ে লাফিয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর জলনৃত্য উপভোগ কিংবা সৈকতে আসা পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের খোরাকই শুধু নয়, সমুদ্রে নামা মানুষের জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করছেন সার্ফাররা। কেউ কেউ আবার একেবারেই লাইফ সেভিংয়ের কাজ করছেন। খবর বাংলানিউজের
এ বিষয়ে ‘ন ডরাই সার্ফ ক্লাবে’র সদস্য এবং কক্সবাজারের অন্যতম সার্ফার সাঈদ হোসাইন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যেন সমুদ্রের সব গার্ডকে আমরা সার্ফিং শেখানোর একটা উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে তারা আরও দক্ষ হয়ে উঠবে। এছাড়া আমাদের সাগরের স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি। পানির নিচে নেই ধারালো কিছু কিংবা প্রবাল। সেইসঙ্গে নেই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণির কোনো ঝুঁকি। আর এসব সুবিধাই কক্সবাজারকে করে তুলবে সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বের অন্যতম আদর্শ জায়গা।
আট বছরের বেশি সময় ধরে সার্ফিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই সার্ফার বলেন, বর্তমানে আমরা প্রায় শতাধিক শিশুকে সার্ফিং শেখানোর কার্যক্রম চালাচ্ছি। এরা দক্ষ হলে আমাদের পরিসর আরও বাড়বে। আমাদের সার্ফাররা দেশের বাইরেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এবং ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে, পুরস্কার জিতে আনছে। এখানেও (কক্সবাজারে) বিভিন্ন সময় সার্ফিং নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্ট হয়। তবে বিদেশি পর্যটকরা এলে বা সার্ফিংয়ে নামলে তাদের কস্টিউম দেখে অনেকেই ভিন্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে, ফলে তারা অনেকেই বিব্রত বোধ করে। এই জায়গাটাতে আমরা আরও সচেতন হলে আমাদের সমুদ্রে সার্ফিংয়ে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা আরও বাড়বে।
এদিকে পর্যটকদেরও আকর্ষণ রয়েছে সার্ফিং ঘিরে। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আগত সাজিদ সুমন নামে একজন পর্যটক বলেন, সার্ফিং একটি রোমাঞ্চকর বিষয়। বিশেষ করে সমুদ্রের সৌন্দর্যের স্বাদ নেওয়ার ক্ষেত্রে এর তুলনা হয় না। ঢেউয়ের সঙ্গে জলক্রীড়ায় সে আনন্দ, তা অন্য সব আনন্দকে হার মানিয়ে দেয়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, ইন্সট্রাক্টরসহ সার্ফিংয়ের জন্য প্রতি ঘণ্টা ৮০০ টাকা এবং ইন্সট্রাক্টর ছাড়া প্রতি ঘণ্টা ৫০০ টাকা হিসেবে খরচ পড়বে। সার্ফিংয়ের জন্য ভালো সাঁতার জানা এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। আর পুরোপুরি সার্ফিং শেখার ক্ষেত্রে গড়ে সময় লাগবে প্রায় এক মাস।