পূর্বদেশ ডেস্ক
কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক মহালে শুটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে। সাগরপাড়ের এই শুটকি মহাল দেশের অন্যতম প্রধান শুটকি তৈরির স্থান। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ টন শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। তবে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার ২৫ থেকে ৩০ টন শুটকি বড় বড় ট্রাকে করে দেশের বাইরে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজারে শীতের আবহের শুরুতেই কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হাজারো শ্রমিক। তাদের বেশির ভাগই নারী। বর্ষা শেষে অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে শুটকি উৎপাদনের কাজ চলবে আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত।
কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে সাগরতীরের নাজিরারটেক এলাকায় বিশাল মহালে শুটকি উৎপাদন চলছে। গভীর সাগর থেকে জেলেরা মাছ ধরে এনে নাজিরারটেক ও ফদনারডেইল এলাকার শুটকি মহালের ঘাটে ভিড়ে। ব্যবসায়ীরা সেই মাছ কিনে ধুয়ে-মুছে শুটকি করার জন্য বাঁশের তৈরি মাচায় তুলে দেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ লইট্যা, ছুরি, পোপা, মাইট্যা, চাপিলা, ফাইস্যা, রূপচান্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দেশের সর্ববৃহৎ শুটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র কক্সবাজার শহরের সমুদ্র তীরবর্তী নাজিরারটেক শুটকি মহাল। করোনা মহামারি ও মাছ ধরা বন্ধের পর আবারও সরগরম হয়ে উঠেছে শুটকি উৎপাদনের কাজ। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে কিছুটা ব্যাহত হলেও এখন পুরো দমে চলছে রোদে মাছ শুকানো।
করোনা মহামারীতে শুটকি মহালে ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা সময় কেটেছিল কষ্টের। পরিবারের উপর নেমে এসেছিল অভাব-অনটন। দীর্ঘদিন পরে শুটকি মহালে মাছ শুকানোর কাজ পুরোদমে শুরু হওয়াতে শুটকি মহালে নির্ভর করে যারা নানাভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা আশায় নিয়ে মাঠে নেমেছেন। বিগত দিনের ক্ষতি পোষানোর স্বপ্নে বিভোর তারা। পরিস্থিতি এমন অনুক‚লে থাকলে আগামী কয়েক মাসে ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। শুটকি মহালে কর্মরত শ্রমিক রাকিব বলেন, দীর্ঘদিন শুটকি মহালে কাজ বন্ধ থাকায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপের মধ্যে চলছিল। এখন কাজ করতে পেরে কিছু টাকা আয় করতে পারছি।
আরেক শ্রমিক শাম্মি বলেন, শুটকি পল্লীর ওপর নির্ভর করে চলে আমার সংসার। শুটকি মহালে কাজ বন্ধ হলে আমার সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন।
শুটকি ব্যবসায়ী হোসেন বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবারো শুটকি ব্যবসা চালু হলো। আশা করি, কয়েক মাসের মধ্যেই বিগত সময়ের ক্ষতিগুলো পূরণ করতে পারব। অপর ব্যবসায়ী জামান বলেন, করোনার কারণে সরকার লকডাউনের দেয়াতে গুদামে জমা রাখা শুটকি মাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে শুটকি মৌসুমে এখন আবারো ব্যবসা শুরু করেছি। বাজারে শুটকির মূল্য ভালো থাকলে অল্প সময়ে বিগত ক্ষতিগুলো পূর্ণ করতে পারব বলে আশা করি। তিনি আরো বলেন, দেশের বৃহত্তম এ শুটকি মহাল থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়। ফলে একদিকে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে শুটকি উৎপাদনেও ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শুটকি মহালের ব্যবসায়ী নুরুদ্দীন কোম্পানি জানান, এখানে রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা ও নাইল্যামাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকতা এএসএম খালেকুজ্জামান বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষজাতের ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুটকি উৎপাদন করা হয়। এখানে উৎপাদিত শুটকি শুধু কক্সবাজারে নয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নাটোরসহ সারাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে। এমনকি এখানে উৎপাদিত শুটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদার একটি বড় অংশ কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকি থেকে পূরণ হয়।