কক্সবাজারে ইয়াবার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৮ দিনে ৯ জন নিহত

40

কক্সবাজারে দীর্ঘ হচ্ছে ক্রসফায়ারে মৃত্যু ও গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত লাশের তালিকা। কক্সবাজার শহর ও টেকনাফে গত ৮ দিনে ৯ ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৪জন, কক্সবাজার শহর থেকে ১ জন ও টেকনাফের উপক‚লীয় এলাকা থেকে ৪ যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া এসব গুলিবিদ্ধ লাশ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এবং তারা ইয়াবার লেনদেন ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্ব নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আছেন। যাদের বেশিরভাগই টেকনাফের। সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে টেকনাফ কেন্দ্রিক বিশেষ অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের অংশ হিসেবে গত আড়াই মাসে টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ২৩ জন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। যার মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৯ জন।
পুলিশের তথ্য মতে, ১২ জানুয়ারি টেকনাফের নাফ নদের রঙ্গিখালী পয়েন্ট থেকে দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কোমরে বাঁধা অবস্থায় ৫০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
১০ জানুয়ারি টেকনাফ উপজেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার খুরের মুখ এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানান টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। নিহতরা হলেন- আবদুর রশিদ (৪৫) ও আবুল কালাম (৩৫)। তাদের বাড়ি সাবরাং ইউনিয়নে। তারা তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
৯ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের কলাতলী কাটাপাহাড় এলাকা থেকে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় ২শ পিস ইয়াবা ও একটি দেশীয় তৈরি এলজি উদ্ধার করা হয়। নিহত জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার ফরিদ আলম ওরফে দারোয়ান ফরিদের ছেলে। ৮ জানুয়ারি টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের কাছ থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় র‌্যাব। নিহতরা হলেন ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার নগরকুন্ড এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান (৩৫) ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বরবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন (২৫)। মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া এলাকায় ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০ হাজার ইয়াবা বড়ি, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করেছে র‌্যাব-৭।
এছাড়া ৭ জানুয়ারি বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে টেকনাফ উপজেলার খুরের মুখ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান, নিহতরা হলেন আবদুর রশিদ (৪৫) ও আবুল কালাম (৩৫)। তাদের বাড়ি সাবরাং ইউনিয়নে।
৫ জানুয়ারি টেকনাফ উপজেলার উপক‚লীয় এলাকা থেকে দুই যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন শুক্রবার দিবাগত রাতে উপক‚লীয় মিঠা পানির ছড়া এলাকা থেকে ওই দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানিয়েছেন, ইয়াবা নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ইয়াবা থাকবে না, ইয়াবা ব্যবসায়ীও থাকবে না-এ আপোষহীন মনোভাব নিয়ে তৎপর রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মরদেহের পাশে ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে। এতে প্রতীয়মান হয়, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ইয়াবার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নিহত হচ্ছে।