কক্সবাজারের ৯ উপজেলায় পানিবন্দি লাখো মানুষ

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদীয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ৪১টি ইউনিয়নের ৪১৩টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখনো পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগে আছেন লাখো মানুষ। এছাড়াও গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ও বুধবার (২৮ জুলাই) দু’দিনে পাহাড়ধস ও ঢলের পানিতে ভেসে জেলার টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও উপজেলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। এদের মধ্যে পাহাড়ধসে মারা গেছেন ৫ রোহিঙ্গাসহ ১৩ জন এবং বন্যার পানিতে ৭ জন।
চকরিয়ার হারবাং রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা মা নেন খিং রাখাইন বলেন, গত তিনদিন ধরে পানি নিয়ে দুর্ভোগে আছি। এতদিন উঠোনে ছিল পানি। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ঘরে ঢুকে পড়েছে। ঘরে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
রামুর রাজারকুলের রাজু বড়ুয়া বলেন, পূর্ব রাজারকুলে ঘরে ঘরে এখন পানি। চুলা জ্বালাতে পারছেন না কেউ। খাবার দাবার নিয়ে খুব কষ্টে আছে মানুষ।
পাশের গ্রাম শ্রীকুলের বাসিন্দা মোকতার আহম্মদ বলেন, এই এলাকাটি একটু নিচু জায়গায়, যে কারণে সারা বছরই পানি নিয়ে দুর্ভোগে থাকতে হয়। এখন বন্যায় দুর্ভোগসীমা ছেড়ে গেছে। খবর বাংলানিউজের।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, টানা বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজার জেলার ৪১টি ইউনিয়নের ৪১৩টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ৭০ হাজার ৩০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, কক্সবাজার জেলার দুই প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহ সাগরে জোয়ার চলাকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। যে কারণে বাড়ি-ঘর বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গত লোকজনকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ১৫০ মেট্রিকটন চাল, ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবারও সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকার কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যায় সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের বালিয়াড়ি ও ঝাউবাগান।
কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরেই কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এরফলে বঙ্গোপসাগর প্রচন্ড উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে যে সমস্ত নৌযান চলাচল করে সেসব নৌযানকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে।