ওহীদুল আলম

10

 

লেখক ও সাংবাদিক। রাজধানী ঢাকার বাইরে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যাঁরা ব্যাপক অবদান রেখেছেন ওহীদুল আলম তাঁদের অন্যতম। ১৯১১ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ গ্রামে তাঁর জন্ম। জ্যেষ্ঠভ্রাতা কথাশিল্পী মাহবুব-উল আলম, কবি দিদারুল আলমসহ পরিবারের অন্যান্য শিল্পী-সাহিত্যিকদের সমবায়ে ওহীদুল আলম চট্টগ্রামে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তুলেছিলেন। ওহীদুল আলমের জন্ম হয়েছিল একটি রক্ষণশীল পরিবারে, কিন্তু তাঁর পিতামাতার প্রগতিশীল মানসিকতার কারণে কাজী নজরুল ইসলাম, আবদুল কাদির, হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী প্রমুখ তরুণ কবির সেখানে অবাধ যাতায়াত ছিল। এর ফলে তাঁদের পরিবারকে কেন্দ্র করে একটি সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক পরিবেশ রচিত হয়, যা ওহীদুল আলমের মানস প্রকৃতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ওহীদুল আলম ১৯৩৬ সালে বিএ এবং ১৯৪০ সালে বিএড পাস করে বহুদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি তাঁর সাহিত্যচর্চা, পত্রিকা সম্পাদনা এবং গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশের কাজও চলতে থাকে। ১৯৩৬ সাল থেকে কয়েক বছর তিনি সাহিত্য পত্রিকা পূরবী প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পত্রিকাটি তখন আঞ্চলিক সাহিত্য ও লোক-ঐতিহ্যচর্চার একটি পটভূমি তৈরি করেছিল। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৭৪ সাল থেকে আমৃত্যু দেশকাল শীর্ষক একটি সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাছাড়া, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সত্যবার্তা ও দৈনিক নয়া জামানা সম্পাদনার সঙ্গেও তিনি কিছুকাল জড়িত ছিলেন। তাঁর আত্মীয় কবি আব্দুস সালামের দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান-এর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করেন।
ওহীদুল আলমের কবি-প্রতিভার প্রকাশ ঘটে বাল্যকাল থেকেই। তাঁর কাব্যগ্রন্থ কর্ণফুলীর মাঝি (১৯৪৬) জসীমউদ্দীনের গাথাকাব্যের ধারায় নতুনতর সৃষ্টিরূপে সে সময়ে প্রশংসিত হয়েছিল। এ পর্যায়ে তাঁর পরবর্তী রচনা হলো বকসু ফকির। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তাঁর খন্ডকবিতাগুলি সংকলিত হয়েছে কাব্যসমগ্রে (১৯৭৯)।
বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওহীদুল আলম গদ্যরচনায় অধিকতর তৎপর হন। তাঁর পৃথিবীর পথিক (১৯৭২) একটি উলে­খযোগ্য উপন্যাসধর্মী আত্মচরিত। কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে তাঁর পূর্বাপর পদচারণার প্রমাণ কিশোরপাঠ্য কাহিনী বীরপুরুষ সোনাগাজী (১৯৫৪), শামীমা (১৯৫৪) এবং জোহরার প্রতীক্ষা ও অন্যান্য গল্প (১৯৭৮)। তাছাড়া, স্কুল কলেজে ত্রিশ বছর (১৯৭৩), কবি দিদারুল আলম (১৯৭৭), চট্টগ্রামের শিক্ষা সাধনা (১৯৮০), চট্টগ্রামের ইতিহাস (১৯৮২), চট্টগ্রামের লোকসাহিত্য (১৯৮৫), আবুল ফজল: সঙ্গ-প্রসঙ্গ ও সমকালীন কথা (১৯৮৭) প্রভৃতি তাঁর আরও কয়েকটি তথ্যবহুল গ্রন্থ। কোরানের জীবনদর্শন গ্রন্থে তিনি ইসলামি মননে অভিষিক্ত হওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। সাহিত্য, শিল্পকলা, দর্শন ও সমাজসেবায় নিয়োজিত প্রায় ছয়শ ব্যক্তির পরিচিতি সম্বলিত বাংলা জীবনীকোষ (১৯৮৭) সংকলন ওহীদুল আলমের এক অমর কীর্তি। ১৯৯৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি লোকান্তরিত হন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া