ওসিদের ওপর ইসির নজরদারি

88

সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে লেগে থাকা সংঘাত-সহিংসতা দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘জিরো টলারেন্স’ বা শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে নির্বাচন কমিশন থেকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি থানার ওসিদের তৎপরতার ওপর নজদারিসহ এরই মধ্যে একাধিক ওসির ‘বিতর্কিত’ ভূমিকা নিয়ে কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিললে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। সংঘর্ষে জড়িতদের পাশাপাশি তাদের আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব পালনকারীদের গাফিলতিকেও ছাড় দেয়া হবে না।
আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাঠানটুলী ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে আজগর আলী বাবুল নামে স্থানীয় এক মহল্লা সর্দার নিহত হওয়ার ঘটনায় ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ এনে তাকে প্রত্যাহারের জন্য কমিশনে আবেদন করেন ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর। একইভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে চান্দগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধেও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে চান্দগাঁও থানার ওসির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি কমিশন। তবে ডবলমুরিং থানার ওসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, ভোটের মাঠে তৎপর আরও কয়েকজন ওসির ভূমিকা নিয়েও প্রার্থীদের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। সেসব ওসির দায়িত্ব পালনের ওপর নিবিড় নজরদারি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
ডবলমুরিং থানার ওসির বিরুদ্ধে প্রার্থীর অভিযোগে যে ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আসছে আমরা সেসব যাচাই-বাছাই করে দেখছি। সত্যতা পেলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইলে কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হলে তিনি যে-ই হোন না কেন, তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচনী মাঠে নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে বলা হয়েছে’।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি সিএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত নিয়মিত মাসিক অপরাধ সভায় সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর উপস্থিত পুলিশের ডিসি থেকে থানার ওসি পর্যন্ত সকল স্তরের কর্মকর্তাদেরকে সিটি নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ে শেষ মূহুর্ত অবধি প্রভাবমুক্ত থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। প্রার্থীদের কে দলীয় বা নির্দলীয় আর বিদ্রোহী- সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার কোনো সুযোগ পুলিশের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাহিনীর পেশাদারি মনোভাবের ব্যত্যয় কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হবে না। দাপ্তরিক নিয়মানুযায়ী সেটি নিয়মিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা হলেও সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সিটি নির্বাচনই ছিল আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান বিষয়বস্তু। এতে বিভিন্ন থানার ওসিরা নির্বাচনকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিদ্যমান চিত্র ও সম্ভাব্য পরিবেশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। কারও কারও বক্তব্যে সংঘাত-সহিংসতার ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে আসে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের করণীয় সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় এলাকায় টহল জোরদার থাকবে। চেকপোস্ট বসানো ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলবে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চলবে। অপরাধ বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে নামবে গোয়েন্দা টিমও। এছাড়া উপকমিশনার বা ডিসি থেকে ওসি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। খুনোখুনি বা হানাহানির মত অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে ওসিদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, কর্মকর্তাদের পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। প্রভাবমুক্ত ও পেশাদারিত্বের মধ্যে থেকেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে তাদের দায়-দায়িত্ব আমি নেব। নির্বাচনে কে প্রার্থী হয়েছেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমি পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ আচরণ ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেখতে চাই। এর বিকল্প কোনো কিছুরই সুযোগ নেই। কেউ এর বাইরে গেলে তাকে এলাউ করা হবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যা করা দরকার, পুলিশ সবকিছুই করবে। মাঠে কে কিভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা আমি কলিগদের নিয়ে নিজেই মনিটরিং করছি। বাকিটা সময় আর পুলিশের কাজের সাথে আপনারা মিলিয়ে দেখবেন।