ওসিকে ধাক্কা দেওয়া উপমন্ত্রীর বডিগার্ড ক্লোজড

27

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবিরকে ধাক্কা দিয়ে আহত করার অভিযোগে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বডিগার্ডকে ক্লোজড করা হয়েছে। অভিযুক্ত বডিগার্ড সন্তু শীল সিএমপির উপ-সহকারী পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে।গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের নির্দেশে সন্তুকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে পূর্বদেশকে জানিয়েছেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) আব্দুল ওয়ারিশ।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণে তাকে (সন্তুকে) ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) আসিফ মহিউদ্দিনকে তদন্ত করে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
এর আগে, ধাক্কা দেয়ার অভিযোগে গত ২০ এপ্রিল কোতয়ালী থানায় সন্তুর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন ওসি জাহিদুল কবির। একইসাথে পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরা জানান, ১৯ এপ্রিল ঈদসামগ্রী বিতরণে পাথরঘাটার ফিরিঙ্গীবাজার এলাকায় যান চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তখন তাকে প্রটোকল দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওসি জাহিদুল। এসময় পেছন থেকে ওসিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন এএসআই সন্তু। ওসি তখন উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এসময় বডিগার্ড ও ওসি তর্কে জড়ালে তাদের শান্ত করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
অনুষ্ঠান শেষে ওসি জাহিদুল কবীর চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর থানায় গিয়ে এএসআই সন্তু শীলের বিরুদ্ধে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে নথিভুক্ত হওয়া জিডিতে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এএসআই সন্তু শীলের ধাক্কায় আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন ওসি জাহিদুল। এরপর ওসি জাহিদুল কবীর সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
সিএমপি সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এএসআই সন্তু শীল তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তার বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার জ্যেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে। ২০১৯ সালের ১৬ মে তার বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। মাদক আইনের ছয়টি মামলার পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করায় তার পক্ষ নিয়ে ওসি নেজামের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে জিডিতে উল্লেখ আছে।
ওসি জাহিদুল ও ওসি নেজাম ছাড়াও নগরীর আরও দু’জন সাবেক ওসি এবং একজন ট্রাফিক কর্মকর্তার সঙ্গেও এএসআই সন্তু শীল দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ আছে।
এএসআই সন্তু শীলের বিরুদ্ধে সোনার বার ছিনতাইয়ে জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর হাজারী লেনে সোনা ব্যবসায়ী দোলন বিশ্বাস তার কাছ থেকে ১০২ ভরি সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তের সময় বাদী এএসআই সন্তু শীলকে শনাক্ত করার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।