ওরা আসে প্রতিদিন সাঁঝের পাখি হয়ে

15

মো. আবু তালেব, হাটহাজারী

হাটহাজারীর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে পা ফেলতেই বুঝা গেল সেখানে এখনও বিরাজ করছে রাজ্যের শূন্যতা। বিদায়ী বছরে ১৩ তরুণ-কিশোরকে হারানোর পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও আজও কাঁদছেন স্বজনেরা। সাঁঝের বেলা সব পাখি নীড়ে ফেরে। স্বজনদের চোখেও ওরা ফিরে অন্তরে। ওরা আসে প্রতিদিন সাঁঝের পাখি হয়ে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে তারা মাইক্রোবাসে করে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়ার পাহাড়ি ঝর্না দেখে ফেরার পথে মহানগর প্রভাতী ট্রেন পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন, আহত হন ৭ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহতের মধ্য থেকে আর ২ জনসহ ঝরে গিয়েছিল ১৩ তরুণ-কিশোরের প্রাণ। নিহত ১৩ জনের সকলেই ছিল খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে মাইক্রোবাস চালক ছাড়া অন্যরা স্থানীয় ‘আর অ্যান্ড জে’ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছিল।
নিহতরা হল কোচিং সেন্টারের চার শিক্ষক জিয়াউল হক সজীব, রিদোয়ান চৌধুরী, ওয়াহিদুল আলম জিসান ও মোস্তফা মাসুদ রাকিব; শিক্ষার্থী আয়াতুল ইসলাম আয়াত, মোসাহাব আহমেদ রাকিব,সামিরুল ইসলাম হাসান, ইকবাল হোসেন মারুফ, তাসমির হাসান, শান্ত শীল, সাজ্জাদ হোসেন, মো. আসিফ উদ্দিন এবং মাইক্রোবাসের চালক গোলাম মোস্তফা নিরু। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে খন্দখিয়া গ্রামের ঘরে গিয়ে দেখা গেছে, নিহত জিয়াউল হক সজীবের মা শাহনাজ আক্তার গৃহস্থালীর কাজ শেষ করে সেমিপাকা ঘরে প্রবেশ করছে। এ সময় অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, মুদিদোকানের কর্মচারী আমার স্বামী আবদুল হামিদের সাথে কোচিং সেন্টার চালিয়ে ও টিউশনি করে ছয় সদস্যের পরিবারের হাল ধরেছিল পুত্র সজীব। তবে, ট্রেনের ধাক্কা আমাদের পরিবারের সব আশা শেষ করে দিয়েছে।
সজীবের বাবা আবদুল হামিদ তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তারকে সান্ত¦না দিয়ে এই প্রতিবেদককে জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি সজীব পরিবারকে সাহায্য করত। স্বপ্ন ছিল পড়া শেষ করে ছেলে চাকরি করবে, সংসারে আর দুঃখ থাকবে না। কিন্তু তার সবই শেষ।
শুধু নিহত সজীবের স্বজনেরা নন, শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি পুরো গ্রামবাসী। মর্মন্তুদ এক দুর্ঘটনায় এলাকার ১৩ তরুণ-কিশোর এর একসঙ্গে চলে যাওয়ার ঘটনাটি তারা এখনো মেনে নিতে পারছে না। তাদের সন্তানদের সাথে হারিয়ে গেল পরিবারের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন।

এলাকার ১৩ তরুণ-কিশোরকে হারিয়ে স্তব্ধ খন্দকিয়া গ্রামে এখনও রাজ্যের শূন্যতা এমনটা দাবি করে চিকনদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ মিঞা বলেন, এলাকার এতগুলো মেধাবী ছেলের একসঙ্গে চলে যাওয়া মেনে নেয়ার মতো নয়। এই শূন্যতা কোনোদিন পূরণ হওয়ারও নয়।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর জেলা পরিষদ থেকে নিহতের প্রতিটি পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসক থেকে নিহতদের ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে; পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন আহত-নিহতদের পরিবারকে ১১ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন। এর পর থেকে তারা আর সাহায্য পায়নি। খন্দকিয়া গ্রামে ১৩ তরুণ-কিশোরের স্মরণে খন্দকিয়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে একটি স্মৃতিস্তম্ব করার দাবি জানান এলাকাবাসী।