ওমিক্রন সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই

11

 

গত একমাস ধরে ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণের কথা শোনা গেলেও এশিয়ায় এর সংক্রমণ ছিল সীমিত পর্যায়ে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে এ সংক্রমণ ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনকভাবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণের খবর সাধারণের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে। গত রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে করোনার সাধারণ সংক্রমণের হার বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। এ সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এরমধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনও ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজনের দেহে। জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন করে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেমন, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যানবাহন চলাচল করবে না। রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না, অর্থাৎ এক ধরনের সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে সেখানে।
মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে এসংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশেও ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞর। তাই পরিস্থিতি সামল দিতে জোর পদক্ষেপের তাগিদ দিয়েছেন তারা। আগামী মার্চ-এপ্রিলে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে এ আশঙ্কায় ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১০ জনের মধ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণের তথ্য দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। তবে কেবল বিদেশ প্রত্যাগতদের ক্ষেত্রে নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে দেশের ভেতরে এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সরকার এ মুহূর্তে কঠোর বিধিনিষেধে না গিয়ে ওমিক্রন প্রতিরোধের উপর জোর দিচ্ছে। ফলে সরকার আগেভাগেই বুস্টার ডোজ টিকা দেয়া শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম কতটা এগিয়েছে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে এবছরের প্রবণতা কেমন হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক তথ্যে দেখা গেছে, এবছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশকে টিকা দেয়া শেষ করতে চায় বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে আশা করা হচ্ছে, চলমান টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে এবং যথাসময়ে তা শেষ করা হবে।
গত ২৮ ডিসেম্বর দেশে করোনা ভাইরাসের বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সম্মুখসারিতে থাকা ব্যক্তিরা বুস্টার ডোজ পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে যাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর ছয় মাস পার হয়েছে, তাদেরই তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার সুরক্ষা দুর্বল হয়ে আসায় বাড়তি আরেক ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ।
সূত্র জানায়, দেশে এখন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার, মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজার, মডার্না অথবা অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল কমিটি-নাইট্যাগ।
তবে বুস্টার ডোজের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে জনসাধারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বড় ধরনের শৈথিল্য লক্ষ করা যাচ্ছে। রাস্তায়, এমনকি ভিড়ের মধ্যেও খুব কমসংখ্যক মানুষের মুখেই মাস্ক দেখা যায়। এ শিথিলতা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, হাত স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি কাজে মানুষকে বাধ্য করার চেয়েও বেশি জরুরি এসব ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ টিকা কার্যক্রম জোরদার হলে ওমিক্রন তেমন সুবিধা করতে পারবে না-এমনটি প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।