ওমিক্রন বিপজ্জনক নয়

17

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালের করোনা রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে ৭৫ ভাগ রোগী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের উর্ধ্বে। তবে এখনও শিশু ও কিশোরদের মধ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি।
গবেষকদের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আগত করোনা রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ে দেখা গেছে ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে আসা করোনা রোগীদের ৭৫ ভাগই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২ জন রোগীর শরীরে ওমিক্রনের সাম্প্রতিকতম ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’ যা জানুয়ারির শুরু থেকে ছড়িয়ে পড়ছে কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানে এই ভেরিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। এই নতুন প্রকরণটি খুব বেশী বিপজ্জনক নয় বলে জানান গবেষকেরা।
তবে এটির স্পাইক প্রোটিনে বেশ কিছু নতুন পরিবর্তন আছে যা এটি শনাক্তকরণকে দুরূহ করে ফেলতে পারে বলে ইতিপূর্বে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এর গবেষকেরা। চট্টগ্রামে এটিই প্রথম ‘বিএ২’ শনাক্তকরণের তথ্য।ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা গেছে- গলা ব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হয়ে যাওয়া, ৯০ ভাগ রোগীর মধ্যেই এই লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ৮৫ ভাগের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা ও মাথা ব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বর পরিলক্ষিত হয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের উর্ধ্বে। তবে এখনও শিশু ও কিশোরদের মধ্যে তা শনাক্ত হয়নি।
এছাড়া ৩০ জন রোগীর নমুনা থেকে করা জিনোম সিকুয়েন্সে দেখা যায়, গতবছরের ১ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে আগত সব রোগীই ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে নবজাতক হতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ রোগীও ছিল।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সার্স কভ-২ এর জিনোম সিকুয়েন্সের আন্তর্জাতিক ডাটাবেস জার্মানির ‘গেøাবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা’ (জিআইএসএইড) থেকে এই জিনোম সিকুয়েন্সগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ে নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, চট্টগ্রামে ওমিক্রনে আক্রান্তদের নিয়ে এত অল্প নমুনার বিশ্লেষণে কোনো উপসংহারে আসা সম্ভব নয়। আরও অন্তত কয়েকশত জিনোম সিকুয়েন্স করলে এর চরিত্র নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্স করা হচ্ছে জিনমিক সার্ভিলেন্স প্রজেক্টের আওতায়। জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। এতে সহ প্রকল্প পরিচালক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস এবং ডা. নাহিদ সুলতানা, আইসিডিডিআরবি’র ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।
সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় আছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন ও আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত। সহকারী গবেষক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, ডা. মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সিকুয়েন্সিং এর সামগ্রিক তত্বাবধানে আছেন আইসিডিডিআরবি’র ভাইরোলজি ল্যাবরেটরি এর বিজ্ঞানীরা।