ওমানকে হারিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

12

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

কী ভয়টাই না পাইয়ে দিয়েছিলেন শুরুর দিকে বোলাররা। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানরা রান নেবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাসকিন আর মোস্তাফিজ মিলে ২ ওভারেই দিলেন ৯টি অতিরিক্ত রান। মোস্তাফিজ এক ওভারেই করলেন ৫টি ওয়াইড। মাহমুদউল্লাহ ছাড়লেন ক্যাচ।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলটিকে মনে হচ্ছিল কেমন যেন খুব অচেনা। তবে সেই অচেনা ভাব কাটিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় নেয়নি টাইগাররা। সাইফউদ্দিন, সাকিব আল হাসান এবং শেখ মেহেদী হাসান বোলিংয়ে আসতেই দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যায়। ওমানের হাত থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিমিষেই নিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন বোলাররা এবং সব ভয় আর আতঙ্ককে পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ২৬ রানের অসাধারণ এক জয়। এই জয়ে বিশ্বকাপে আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ।
১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতেই স্বাগতিকরা তুলে ফেলেছে ৪৭। যদিও যতটা না কৃতিত্ব ওমানের ব্যাটসম্যানদের তার থেকেও বেশি বাংলাদেশের বোলারদের। তাসকিন আহমেদ আর মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম দুই ওভারেই এসেছে ২৪ রান। এমনকি ৫টি ওয়াইড দিয়ে দ্বিতীয় ওভার করতে মুস্তাফিজ লাগিয়েছেন ১১ বল।
শুধুই বোলার নয়, বোলারদের সহায়তা করার কাজটা করতে পারেননি ফিল্ডাররাও। বাংলাদেশের জয়ে পথের কাঁটা জাতিন্দর সিং আর কাশ্যপ প্রজাপতি দুজনকেই জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। অনবরত সিঙ্গেলস খেলে বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন জাতিন্দর সিং। ১৩ নম্বর ওভারে তাকে ফেরান সাকিব আল হাসান, ওমানের রান তখন ৯০।
তবে বাংলাদেশের জয়ের প্রধান নায়ক মাহেদি হাসান। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও আঁটোসাঁটো বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছেন, তার বোলিং স্পেল চার ওভারে মাত্র ১৪ রানে ১ উইকেট। মাহেদি যেখানে চাপে রেখেছেন উইকেট নেওয়ার কাজটা করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। যেখানে প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান খরচ করেছেন, সঙ্গে ২টি উইকেট নিয়েছেন।
এক পর্যায়ে ওমানের সামনে জয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ৫ ওভারে ৫৪, তাদের হাতে তখনো ৬ উইকেট। ১৭ নম্বর ওভারে পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে জয়ের পাল্লা নিজেদের দিকে টেনে আনেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। চার ওভার শেষে তার বোলিং স্পেল ২৮ রানে ৩ উইকেট। বাকি কাজটুকু করেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার শিকার রানে চার উইকেট। শেষ পর্যন্ত ওমানের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১২৭।
এর আগে টস জিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিতে বোধহয় খুশি হতে পারেননি দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ। তাদের ব্যাটিংয়ের কৌশল দেখে অন্তত সেটিই ধারণা করা গেল। বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রথম ২ ওভারে ৮টি বলই ডট। দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে তুলতে পারলেন ৬ রান। তৃতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৪ রানে জীবন পেলেন লিটন, তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন কাশাপ। কিন্তু সাজঘরে ফেরার বোধহয় তাড়া ছিল লিটনের। পরের বলেই আউট হলেন মাত্র ৪ রান করে।
নাঈমকে নিয়েও আলোচনা দীর্ঘদিনের। পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাননি নাঈম, গতকাল ফিরেছেন সৌম্য সরকারের পরিবর্তে। সুযোগ পেয়ে শুরুতে ভালোকিছু দেখাতে পারেননি। নড়বড়ে ব্যাটিং করে গেছেন মন্থর স্ট্রাইক রেটে। ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ ও ২৬ রানে। তখনও রানের চেয়ে বল বেশি খেলে ফেলেছিলেন তিনি। তবে ওমানের ফিল্ডাররা সহজ দুটি ক্যাচ নিতে পারেননি।
ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে শেখ মেহেদীকে ৩ নম্বরে নিয়ে আসে ম্যানেজমেন্ট। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মেহেদী। ফায়াজ বাটকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দেরেন শূন্য হাতে। সাকিব আল হাসান ৪ নম্বরে নেমে অস্বস্তিতে ভুগেছেন অনেকক্ষণ। তবে সময়ের সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হন সাকিব। ততক্ষণে নাঈমের ব্যাটেও ফেরে স্বস্তি। দলীয় ২১ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে তুলতে পারে ২৯ রান।
এরপর সুযোগ পেয়ে বড় জুটি গড়েন সাকিব আর নাঈম। দুজনেই ছুটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে সাকিব রান আউটের শিকার হন। ফেরেন ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। সাকিব না পারলেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক তুলে নেন নাঈম। তার ফিফটি আসে ৪৩ বলে। যা একেবারেই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়।
সাকিবের বিদায়ের পর নুরুল হাসান সোহান নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে। সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। জেসান মাকসুদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৩ রান করে। তবুও ব্যাট হাতে দেখা যায়নি মুশফিকুর রহিমকে। আফিফ হোসেনের উপর আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। হতাশ করেন তিনিও। ৫ বল খেলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নে আফিফ।
তৃতীয়বার যখন ক্যাচ তুললেন নাঈম, সেবার আর সুযোগ মেলেনি। থেমে যায় তার ৬৪ রানের ইনিংস। ৫০ বলে খেলে ৩টি চার ও ৪টি ছয় মারেন এই বাঁহাতি তরুণ। ১৯ বলের ব্যবধানে দ্রæত ৪ উইকেট হারিয়ে রান তোলার গতিতে ভাটা পড়ে বাংলাদেশের। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুশফিকুর রহিম এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি। খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৬ রান করে। পরের বলেই বিদায় নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
শেষদিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে টাইগারদের ইনিংস থামে ১৫৩ রানে। জয়ের জন্য ওমানের প্রয়োজন ১৫৪ রান। ওমানের হয়ে ফায়াজ বাট সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন।