ওমরাহ টিকিটের দাম বেড়েই চলছে সিন্ডিকেট দখলমুক্ত করা হোক বিমানের টিকিট

89

কোভিড ১৯ এর কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দীর্ঘ দুই বছর প্রায় ওমরা ও হজ পালনের জন্য সাউদি আরবে যেতে পারেননি। করোনা সংক্রমণ থেকে সাউদি জনগণকে সুরক্ষায় দেশটির সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার ফলে ওমরা ও হজের অনুমতি দেয় সাউদি সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে নানা শর্তও জুড়িয়ে দেয়া হয়। এবার বাংলাদেশ থেকে বড় একটি অংশ হজে গেলেও ৬০ এর ঊর্ধ্বে যাদের বয়স হয়েছে, যাদের করোনা টিকার সনদ নেই, সর্বোপরি হজের টাকা আবাসিক খরচ ও বিমান টিকেটের দাম বৃদ্ধির ফলে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করেও হজে যেতে পারেন নি। ফলে ওমরা যাত্রী আগের যেকোন সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আর অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান ও সাউদি এয়ারলাইন। অভিযোগ রয়েছে টিকিট সিন্ডিকেট ওমরা যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করছে। জাতীয় একটি দৈনিকে এ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওমরাযাত্রীদের বিমানের টিকিটের দাম দেদারছে বাড়ছে। যাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটির তুলনায় ওমরাযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও বিমান টিকিটের দাম বাড়াচ্ছে। টিকিটের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় অনেক ওমরাযাত্রী বাধ্য হয়েই বিজনেস ক্লাসের টিকিট অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কিনে ওমরায় যাচ্ছেন। এ সুযোগে সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বøক করে রেখে চড়া দামে বিক্রি করছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট অতিরিক্ত দিয়ে কিনতে ওমরাযাত্রীদের গলদঘর্ম। সিস্টেমে বিমানের ওমরাযাত্রীদের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের একটি টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। আবার বেশি টাকা দিলে ওমরাহ টিকিট মিলছে। যথাসময়ে সাউদিয়া ও বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে ওমরাযাত্রীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। হাবের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, একটি টিকিট সিন্ডিকেট মহল অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিতে বেনামে আগামী দেড় মাসের টিকিট বিক্রি করে সংকট সৃষ্টি করছে। আটাব অনতিবিলম্বে নামহীন সকল অবৈধ টিকিট বাতিল করে এজেন্সির মাধ্যমে সিস্টেমেটিক বৈধ নামে টিকিট বিক্রিসহ ওমরাযাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর জন্য শিগগিরই বিমানের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চিঠি দেয়া হবে বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে পাঁচটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ায় সিন্ডিকেট চক্র ওমরাহ টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। বিমানের মতিঝিল অফিসের ম্যানেজার সেলস দেড় মাসের টিকিট নামে বেনামে সিন্ডিকেট চক্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ওমরাহ এজেন্সির মালিকরা বিমান অফিসে ধর্না দিয়েও ওমরাযাত্রীদের কোনো টিকিট পাচ্ছে না। আটাব ও হাব নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, বিমানের দেড় মাসের ফ্লাইটগুলো যথাযথভাবে চেক করা হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তারা ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট দ্রæত নিরসনের লক্ষ্যে সাউদি আরবের রুটে একাধিক অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু এবং ওমরাহ এজেন্সিগুলোর কাছে সরাসরি টিকিট বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিতকরণে বিমান মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সূত্র জানায়, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স বর্তমানে জনপ্রতি ওমরাহ টিকিট ৭৫ হাজার টাকা, ৮০ হাজার টাকা এবং ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। থার্ড ক্যারিয়ারগুলোও প্রায় ৮৮ হাজার টাকায় ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে। বিমান ওমরাহ টিকিট ৭২ হাজার টাকা ও ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে বিমান ওমরাহ টিকিটের দাম বৃদ্ধি করে ৮৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। এসব টিকিট কোনো সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে কিনতে হলে আরো অতিরিক্ত কয়েক হাজার টাকা গুনতে হবে। সরলপ্রাণ ধর্মভীরু মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে যারা নানা অপকৌশলে সিন্ডিকেট কিংবা এককভাবে বিমানের টিকিটের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, তাদের দ্রæত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা মনে করি, বিষয়টি সরকারের দৃষ্টির বাইরে থাকার কথা না। এক্ষেত্রে ওমরা যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিবে সরকার-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।