ওপেন সিক্রেট

210

ওপেন সিক্রেট এর শব্দার্থ অর্থ হচ্ছে উন্মুক্ত রহস্য। সরল বাংলায় যাকিছু গোপন করার তাকে এক্কেবারে খোলামেলা করে দেয়ার প্রবণতা। ইজ্জত-আব্রæ. লাভ-লজ্জা, মান-সম্মান এসব কিছু আঁকড়িয়ে ধরে না রাখতে পারাটা, সব কিছুর গোপনীয়তাকে উন্মুক্ত করে দেয়াটাকে ওপেন সিক্রেট, বাংলায় উন্মুক্ত রহস্য বলে। নৈতিকতার স্খলন যখন উদ্ভব হয় তখন মানবিক হায়া শরমের স্খলন ঘটে। এ অধঃপতন এতোই নিম্নস্থরে নিপাতিত হয়েছে ওখান থেকে উর্ধ্বে উঠে আসার সুযোগ সুদূরপরাহত। ইরান দেশের অন্যতম নেতা আয়াতউল্লাহ, খোমিনীর একটা বাক্য যতœ করে আতœস্থ করেছি। বাক্যটা হচ্ছে একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ঐ জাতির সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিলেই যথেষ্ট।
এক জাতি যখন স্বীয় রীতিনীতি, আচার-আচরণ যাকিনা যুগ যুগান্তর ধরে অনুসরণ করে তখন সংস্কৃতি সংরক্ষিত হয়। একথা নির্দ্বিধায় দাবি করা যায়। ইরানের শাহ ছিলেন আমেরিকানর তল্পেীবাহ সরকার প্রধান তখন ইরান দেশ স্বীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে পড়ে। শাহকে উৎখাত করার মধ্যে দিয়ে ইরান স্বীয় সংস্কৃতি চর্চাতে মনোনিবেশ করে। একবার এক বিদেশীনি মহিলা সাংবাদিক খোমিনীর এক স্বাক্ষাৎ প্রার্থনা করেন খোমিনী ঐ মহিলাকে আব্রæ সংরক্ষণ পূর্বক বোরকা পরে তাঁর সান্নিধ্যে আসার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করলেন এবং তা-ই অনুসৃত হয়। এরপর থেকে দৃশ্যমান হয় ওখানকার মহিলারা শাহ্-র শাসনামলের মতো হাঁটুর ওপরে বস্ত্র পরিধান করেনা। স্বীয় অঙ্গের ইজ্জত আব্রæ রক্ষার্থে ভালো রকম পরিচ্ছদে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে। এটাকে বলা যায় নেতৃত্বের দৃঢ়তা। যখন নেতৃত্বের দৃঢ়তা সুসংহত হবে তখন আইন এবং আইন পালনের বাধ্যবাধকতার পরিধি সম্প্রসারিত হবে।
বিদেশি অপসংস্কৃতি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে নিষ্ঠুরতার সাথে গ্রাস করেছে। জনসমক্ষে মানুষ অপকর্ম করতে এতো বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে যে আঙ্গুল উঁচকিয়ে বীরত্বের সঙ্গে সরকার এবং সরকারি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদেরকে খবরদারী করতে দিধা করছেনা। আইনের কঠোরতম প্রয়োগ হলে সরকারি নির্দেশনাকে অন্তত সমীহ করে কথা বলতো। সাম্প্রতিক যে সমস্ত আকাম, কুকামসমূহ পত্র পত্রিকাতে চমক সৃজন করেছে এসব সংবাদ দারুণ চমকদার, পত্রিকার বেচাবিক্রিও বেড়েছে। কথা হচ্ছে চমকদার সংবাদগুলো কি কি যেগুলো পাঠকের মধ্যে এতো আগ্রহের উদ্ভব ঘটিয়েছে। গত ৬ই অক্টোবর এশিয়ার ৪০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং তালিকা প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২টির মধ্যে ১টিও র‌্যাংকিং এ নাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চ শিক্ষার মান প্রশ্ন বিদ্ধ। চলিত বছর বুয়েটের ছাত্র হত্যার ব্যাপারটা খোদ জাতিসংঘে নিন্দিত হয়েছে।
হত্যা,গুম,ধর্ষণ, ভূমিদস্যুতা, রাস্তা-ফুটপাত বেদখল হওয়া, চট্টগ্রাম বন্দরে সুতার বদলে বালি ও মাটির চালান, চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে মাসে ৬০লক্ষ টাকা লুটপাট, চকরিয়ায় জমির বিরোধে কুপিয়ে শিক্ষক হত্যা। ছাত্র নেতার পরিচয়ে ১২০টি আসন বরাদ্দের আবেদন (ট্রেনে) দুর্নীতি এবং দূর্বৃত্তায়ন যেন উন্মুক্ত রহস্যে পরিণত। মানুষের মানবিক নীতিবোধ, দয়া-মায়ার আধঃপতন হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানীরনসিহত কেউ আমলই দিচ্ছে না। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অবক্ষয়রোধে মানববন্ধনটাই যেন নিস্ফল প্রয়াস। কত প্রাণ সংহার হলো মর্মান্তিকভাবে এবং প্রকাশ্যে খুনিরা বীরদর্পে বীরত্ব প্রকাশ করে এধরনের আচরণ অবশ্যই নিন্দনীয় অপরাধ এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র তার প্রশসনিক এবং বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যদি দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়। তবে জনগণের অনুকূল সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হবে। ক্ষমতাকে অপপ্রয়োগ নয় সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। যারা ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিকে রূপান্তর হয়ে গেছে তারা জনগণের চোখকে ফাঁকি দিতে অবশ্যই পারবেন না। জনমত যদি বিগড়ে যায়, তবে তা প্রতিরোধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সততা ও সত্যের জয় সুনিশ্চিত। নীতি, সততা এবং আদর্শবর্জিত, উগ্র মানসিকতাও হিংস্রতাকে পুঁজি করে মানুষের সমর্থন পাওয়া যায় না। যাঁর সৎ, যারা দেশের তরে ত্যাগী, যারা নীতির প্রশ্নে আপোষহীন এবং দেশের প্রেমের মানষিকতায় পরিপ অবশ্য জীবনযুদ্ধে জয় তাঁদের জন্য সুনিশ্চিত। তথ্য প্রযুক্তির দিনে আজ কোন ঘটনায় রহসাবৃত নয়। আজকের দিনে সবকিছুই যেন উন্মুক্ত রহস্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীশূন্য সহনশীল নীতি ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে হলে তাঁকে আন্তরিক সমর্থন এবং সহযোগিতা করতে হবে।
প্রত্যেকের অবস্থান থেকে দুর্নীতিকে পরিহার করতে হবে এবং নিরুৎসাহিত করতে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা উন্নত দেশের কাতারে পর্যায়ভুক্ত হবো। এ ঘোষণার বাস্তবায়ন আরো আগে হতে পারবে যদি দেশ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন সম্ভব হতো। যতবেশি উন্নতি ততবেশি যেন দুর্নীতি হয়েছে। যার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রয়াস ভেস্তে যাচ্ছে। ছাত্র এবং ছাত্র রাজনীতি। এতদসম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে বলবো ‘ছাত্র নং অধ্যনং তপোঃ। অর্থাৎ অধ্যয়নেই হচ্ছে ছাত্রদের তপস্যা বা উপসনা। এদিকে ছাত্রদের পৃষ্ঠপোসকতার উৎসাহিত করা আবশ্যক। একটা ছাত্র একটা পরিবার বা মা বাবার যেমন স্বপ্ন তারা রাস্ট্রের ও স্বপ্ন। তাদের অপকর্মের জন্য তাদের অধ্যয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দুঃস্বপনের কারণ হবে। রাজনীতিকে আমি মনে করি দেশ সেবার অন্যতম ক্ষেত্র। কিন্তু রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের স্বার্থকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে স্বীয় স্বার্থের কাছে-যেমন ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি, মাস্তানি-চাঁদাবাজী, মানি লন্ডারিং জুয়ার ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্থের পর্বত সৃজন করা রাজনীতি নয়। দেশপ্রেমের যাদের ঘাটতি, স্বীয় স্বার্থের কাছে দেশের স্বার্থ যাদের কাছে পরাভুত দেশের সেবক হওয়ার উপযুক্ততা তাদের নেই। দেশের অভিবাবকের দায়িত্ব নিয়ে রাজনীতি করার অধিকার তাদের নেই। ইতিপূর্বে যেসব ত্যাগী রাজনীতিক আমরা হারিয়েছি তাদের স্থলাভিষিক্ত হবার মতো যোগ্য নেতৃত্ব আর উঠে আসেনি। দিন দিন রাজনীতি বাণিজ্যিককরণ হয়ে উঠেছে। যারা ইনসভার সদস্য তারা বেশির ভাগ ঋণ খেলাপী এবং বেশিরভাগ শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী। এ সত্যগুলো উন্মুক্ত রহস্য। দেশের কোন স্তরই ত্রæটিমুক্ত নয়। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার করে দেশকে রাহুমুক্ত করতে হবে। নচেৎ কারো কাছে মুখ তুলে কথা বলার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় অবস্থান করলে তখন করার কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মেট্রিক ইংরেজি পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন এসেছিলো ডযধঃ ধিং ঃযব সধরহ ঃযবসব ড়ভ এঁষষরাবৎ’ং ওৎধাবষ ? উত্তর দিয়েছিলাম ঞযব ঈড়ষষবপঃরাব ভড়ৎপব রং ংঃৎড়হমবৎ ঃযধহ ড়হব নরমবংঃ ংরহমষব ভড়ৎপব. অর্থাৎ একক সর্বোবৃহৎ শক্তির চাইতে সম্মিলিত শক্তিই বড়ো।

লেখক : কলামিস্ট