ওজন স্কেল প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

40

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও দাউদকান্দি এলাকায় স্থাপিত ওজন স্কেল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এই সড়কে ওজন স্কেল প্রত্যাহার করা না হলে আগামী একমাস পরে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এ হুঁশিয়ারি দেন। সভায় খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদের পরিচালনায় সংগঠনের সভাপতি ও চিচাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অন্য কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই নিয়ন্ত্রণের ফলে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সক্ষমতা হারাচ্ছেন এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না।
তিনি বলেন, চিচাগাং চেম্বারের বিভিন্ন মিটিংয়ে ওজন স্কেলের বিষয়টি প্রত্যেকবার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে রাখা হয়। আর চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে এমন কোনো মন্ত্রী-এমপি নেই যাদেরকে এই বিষয়ে বলা হয়নি। এরপরও কোনো ধরনের সুরাহা হয়নি। তাই মহাসড়ক থেকে ওজন স্কেল প্রত্যাহারের জন্য পুরো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবো।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, আমরা আর বৈষম্যের শিকার হতে চাই না। সারাদেশে ৩৪টি মহাসড়ক রয়েছে, সবগুলো সড়কে যদি ১৩ টন পণ্য পরিবহন নিশ্চত করা হয় তাহলে চট্টগ্রামেও স্কেল থাকুক। অন্যথায় চট্টগ্রামের সড়ক থেকে স্কেল তুলে দেয়া হোক। এছাড়া চট্টগ্রামবাসীর ‘মরণ ফাঁদ’ ওজন স্কেল প্রত্যাহারে আগামী একমাস পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা।
চিটাগং কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, চট্টগ্রাম দীর্ঘ মেয়াদী বৈষম্যের শিকার। শুধুমাত্র মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপনের কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তা নয়, আরও অনেক কিছু নিয়ে বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এসব নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজকে আওয়াজ তুলতে হবে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের যেকোনো যৌক্তিক দাবির বিষয়ে আমরা পাশে থাকবো।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা সরকারের মুদ্রার এপিট ওপিট। দেশে উন্নয়ন হোক, তবে চট্টগ্রাম কেন বৈষম্যের শিকার হবে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবো। এই স্কেলের কারণে ভুক্তভোগী পুরো চট্টগ্রামবাসী।
একই সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ওজন স্কেল আমাদের পথে বসিয়েছে। করোনার কারণে যা ক্ষতি হয়েছে ওজন স্কেলের কারণে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। একই সাথে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই স্কেলের কারণে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ টাকা বেশি। পণ্য পরিবহন খরচও দিগুণ।
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ দে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ১৮-২০ টন পণ্য পরিবহনে যা খরচ পড়ে ওজন স্কেলের কারণে মাত্র ১৩ টন পণ্য পরিবহন করতে একই অংঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামের বাইরে থেকে ১৩ টন পণ্য নিয়ে ট্রাক আসলে পরিবহন খরচ পড়ছে আমাদের তুলনায় অর্ধেক। এ কারণে প্রতি টন পণ্যের খরচ ৩-৪ টাকার ব্যবধান হয়ে গেছে। এমন বৈষম্যের কারণে প্রতিযোগিতার বাজারে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে পড়ছেন।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, চালের বিষয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একাধিক বার বৈঠকে ওজন স্কেলের বিষয়টি তুলে ধরা হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন আগের মত নেই। কিছুদিন আগে একটা বিষয় নিয়ে চাক্তাইয়ে ব্যবসাীরা ২ ঘণ্টার কর্মববরতি ঘোষণা করেন।
রাইচ মিল সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দীন বলেন, অনেকদিন ধরে এ বিষয়ে আন্দোলন চলছিল, কিন্তু আমরা সফল হতে পারিনি। চালের যথেষ্ট মজুদ আছে, সে কারণে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোছাইন পুরো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে চিটাগাং চেম্বারের নেতৃত্বে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমের সরকারের উচ্চপর্যায়ে স্কেলের বিষয়ে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান।
মতবিনিময় সভায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালামত আলী, পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সস্পাদক নিজাম উদ্দিন, পণ্য পরিবহন সমিতির নেতা অনিল চন্দ্র পাল ও আন্তঃজেলা পরিবহন মালিক সমিতির শফিউল আলমসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় লাঘব করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ টন ওজন পরিবহনের বাধ্যবাধকতা স্থায়ীভাবে বাতিল করার দাবিতে শুরু থেকে সোচ্চার ছিল ব্যবসায়ীদের সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।