এ.কে.এম. সামসুল হক খান

9

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সরকারি কর্মকর্তা ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর শহীদ। তিনি ১৯৭১ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধাচরণ করায় ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। শামসুল হক খান ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন। বাঙালি হওয়ার কারণে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তাকে মেডিকেলে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপর তিনি কিছুদিন ভূগোল শাস্ত্রে অধ্যাপনা করার পর সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং মেডিকেল পরীক্ষার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে জয়ী হন।
১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদ, ড. আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক খোরশেদ আলম এমসিএ, আলী আহমেদ এমসিএ প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে শামসুল হক খান কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রিম প্রতিরোধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার নির্দেশে কুমিল্লা সেনানিবাস-এ রেশন ও বাহনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুমিল্লার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করতে গেলে পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন জেলা প্রশাসকের নির্দেশ ছাড়া স্টোরের চাবি হস্তান্তর করতে অপারগতা জানান। পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য স্থানীয় সামরিক আইন প্রশাসক ডেকে পাঠালে বেসামরিক প্রশাসনের জেলা প্রধান শামসুল হক খান তাতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তার এ আচরণে পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তারা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ২৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা সার্কিট হাউস থেকে মেজর আগা ও ক্যাপ্টেন বোখারীর নেতৃত্বে তাকে ও পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়ার পর শামসুল হক খান আর ফিরে আসেননি। স্বাধীনতার পর সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বাংলাদেশ সফরে এলে শামসুল হক খানের পরিবার তার সঙ্গে দেখা করে শামসুল হক খান সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসককে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করা হয়। মু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ শামসুল হক খানের আত্মীয়দের জানান, তাকে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে দেশের ‘সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার’ হিসাবে পরিচিত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয় তাকে। শহীদ সামসুল হক খানের নামে কুমিল্লায় একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিয়াম মিলনায়তনের ভাষণকক্ষটির নামও তার নামে করা হয়েছে। সূত্র: বাংলাপিডিয়া