এ কে এম আবদুল মন্নান সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল

14

১৯২৮ সালে চন্দাইশের (তৎকালীন পটিয়ার) বিপ্লবতীর্থ বরমা গ্রামে এ কে এম আবদুল মন্নান জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই মহান নেতা ২০০১ সালের ২৩ মার্চ নাফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর পিতার নাম এস এম আবদুল অদুদ ও পিতামহের নাম ছাদেক আলী মুনসী। পিতৃভূমি বরমায় সম্প্রতি তাঁর নামে একটি সড়ক (এ কে এম আবদুল মন্নান সড়ক) ও এ কে এম আবদুল মন্নান বাড়ি সড়ক নামকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাড়ির সামনে নির্মাণ করা হয়েছে একটি দৃষ্টি নন্দন তাঁর ম্যুরাল। ইতোমধ্যে তাঁর জেষ্ঠ্য কন্যা দৈনিক আজাদীর সহ-সম্পাদক ইয়াসমিন ইউসুফের সম্পাদনায় ‘সময়ের পরিক্ষিত জননেতা এ কে এম আবদুল মন্নান’ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যা অনুসন্ধানী পাঠক, দক্ষ ও কৃতী নেতাদের কাছে সাড়া জাগিয়েছে। তাঁর জন্মভূমি বরমা অত্যান্ত উর্বর ও ইতিহাস বিখ্যাত। বরমাকে আদর্শ গ্রাম গড়ার স্বপ্ন বুনতেন এবং বরমাকে নিয়ে তিনি গর্ব করতেন।
এ কে এম আবদুল মন্নান সব সময় দেশের উন্নয়ন ও পরের কাজ করেছেন। অন্যায়, অত্যাচার ও অপরাধের প্রতিবাদ করতেন। নিজের সুখ ও সম্পদ সকলের জন্য উৎসর্গ করতেন। শৃঙ্খলবন্দী পরাধীন দেশ ও দেশবাসীর কথা চিন্তা করে একসময় নিজেকে রাজনীতির সাথে জড়ালেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থ্যানসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সম্মুখভাগে থাকতেন। এমনকি ভাষা আন্দোলনেও তাঁর অংশগ্রহণ ছিল। দেশ গড়ার কাজে ছিলেন অবিচল। যতই বাধা আসুক, কখনো তিনি পিছপা হননি। সকল প্রতিক‚লতা সাহস ও তীক্ষè মেধা দিয়ে মোকাবেলা করতেন। তিনি আরো উদ্দীপ্ত হন ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে তিনি মুক্তি সংগ্রামে জনমত গড়ে তোলেন। তাঁর দেশপ্রেম, ত্যাগ, সাহসিকতা ও রাজনৈতিক মেধার কারণে দেশদ্রোহীদের রোষানলে পড়েন। যুদ্ধ চলাকালে তাঁর বসত ঘর পুড়িয়ে দেশশত্রæরা পাশবিক উল্লাস করে। যুদ্ধে আর্থিক, আত্মিক, সাময়িক, সামরিক, কায়িক, কাব্যিক, যৌক্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিকসহ বিভিন্নভাবে গণমানুষকে জাগিয়ে তোলেন। জীবন বাজি রেখে মুক্তিপাগল মানুষদের সাথে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, য্দ্ধু সবকিছুতে তিনি সফল ও উপমেয়। তিনি (এ কে এম আবদুল মন্নান) সমৃদ্ধ ও আলোকিত জাতি গড়ার জন্য রাজনীতি করেছেন। গরীব ও অসহায়দের অর্থ বা পরামর্শ যখন যা প্রয়োজন তা দিতে চেয়েছেন। তিনি অসহায়বান্ধব হলেও বিক্ষাবৃত্তি পছন্দ করতেন না। তাই তিনি কর্মসংস্থান বা আয়বর্ধক কাজে গরীবদের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। বিশেষ করে উন্নত প্রযুক্তির চাষাবাদ, কুঠির শিল্প ও কারিগরি শিক্ষায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করতেন। যোগাযোগসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, হাট-বাজার আধুনিকী করণ, জন্মস্থান বরমার ডাকঘর-এর ভৌতঅবকাঠামো উন্নয়ন, বরমা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করণ, বরমা কলেজ প্রতিষ্ঠা, পাবলিক পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপনসহ ব্যারিস্টার যাত্রামোহন সেনগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয় উন্নয়ন, বরমা মাদরাসা উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা দপ্তরে যোগাযোগ করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে নিজ মাতৃভূমি বরমাতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫এ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর জাতির অন্যান্য স্বপ্নের সাথে তার স্বপ্নেও ভাটা পরে। পরবর্তীতে ১৯৮৪ইং সালে আবার তিনি অন্যান্যদের সাথে বরমা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। বরমা কলেজের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বরমা কলেজের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা কমিটির (প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির বা প্রথম কমিটির) সভাপতি ছিলেন তিনি। কর্মবীর কিংবদন্তী রাজনীতিক এ কে এম আবদুল মন্নান। শুদ্ধ রাজনীতির সাধক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহচর, সমাজ সংস্কারক, কর্মবীর কিংবদন্তী রাজনীতিক এ কে এম আবদুল মন্নান। যার জীবন ও স্বপ্ন জুড়ে ছিল রক্তার্জিত সবুজ শ্যমলিম বাংলাদেশ, সর্বোপরি মা, মাটি, মানুষ।
লেখক : সাংবাদিক ও ছড়াকার