এস, এম, ওসমান

4

প্রাচীনকালে শিক্ষা অন্বেষণে ছাত্ররা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করত। জ্ঞানের সম্ভার আলেমের নিকট উপস্থিত হয়ে নিজের জ্ঞান অন্বেষার অভিপ্রায় ব্যক্ত করতেন। হযরতের মর্জি ও অন্বেষী ব্যক্তির আদব আহলাকের উপর নির্ভর করতো ছাত্র হবার যোগ্যতা।
ইসলামী সোনালী যুগে এই প্রথাটি ব্যাপক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠে। পবিত্র হাদীসে পাকে রসূল পাক(দ:) এরশাদ ফরমান জ্ঞান অর্জনের জন্য আপন বাসগৃহ হতে বাহির হয়ে পুনরায় আপন গৃহে প্রবেশ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়।অপর একটি হাদিসে রসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম সাহাবায়ে একরামকে এরশাদ করেন জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে ভ্রমন কর। (ইত্যাদি হাদিস বিদ্যমান।)
ইসলামের ইতিহাসে জ্ঞান অর্জনের যে ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হয় তা-সনদ(হাদিস শরীফের ক্ষেত্রে) হিসেবে স্বীকৃত। সময় অতিক্রম করার সাথে সাথে ইসলামী মতাদর্শের পন্ডিতরা জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রাখতে সূচনা করেন। সময়ের চাহিদা ও আগামী বিশ্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কোরআন ও হাদীস শরীফ থেকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলো উন্মোচন করেন। ইসলামী আইন শাস্ত্র, গণিত, জ্যামিতি, রসায়ন বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পৌরনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, জ্যোতিষ শাস্ত্র, ইত্যাদি(লেখা সংক্ষেপের জন্য বিশদ আলোচনা করা হয়নি)আবিষ্কার করেন।
মুসলিম পÐিতগণ বিশ্ববাসীকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন ধারা উপহার দিতে শুরু করে। এখনো আধুনিক বিশ্বের( সভ্যজাতির) জ্ঞানি ও বিজ্ঞানীরা ওই সমস্ত মুসলিম জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের কাছে মুখাপেক্ষি।
সেই সময়কার মুসলিম আলেমগণ সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এতই গ্রহণযোগ্য ছিল যে তাহাদের হাতে লেখা দেওয়া সনদ সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা পেত।রসুল পাক (সা)এর মেরাজ হিসেবে সর্ব ক্ষেত্রে পাগরী অনন্যা ভূমিকা রেখে আসছে। এটি ইসলামী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এর অন্যতম নিদর্শন। পাগড়ী মানুষকে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ট করে। অন্যদিকে ইসলামী শরীয়ত, তরিকত, হাকিকত,মারেফত, জ্ঞান , বিজ্ঞানের ও পাÐিত্যের নিদর্শন হিসেবে বিবেচ্য।
একসময়ের জ্ঞান বিজ্ঞানের সুতিকাগার বাগদাদের নিজামিয়া মসজিদে গড়ে উঠে শিক্ষা অঙ্গন। ইসলামের প্রচার প্রসারের সাথে সাথে শিক্ষার আলো বিকশিত হতে থাকে দিগন্ত জুড়ে। সেই আলোয় ভারতবর্ষেও আলোকিত হয়।
ভারতবর্ষের হাদিস শরীফের ইতিহাসের অধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সরকারে দোজাহান (দ:)ভারতবর্ষে হাদিস শরীফের হেকমতের জন্য হযরত আব্দুল হক মহাদ্দেস দেহলভী কে স্বপ্নযোগে নির্দেশ দেন (হে আব্দুল হক). তুমি হিন্দুস্তানের জমিনে হাদিসের তালিম দাও। সে থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ( দ:)এর আদেশ মত ভারতবর্ষের দিল্লিতে শিক্ষা দিয়েছেন আমরণ। তিনি সরকারে দোজাহার উপদেশমতো হাদীস শরীফকে যথাযথভাবে উম্মতে মুসলিমার কাছে তুলে ধরেন। তাহার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, উত্তর পূর্ব এশিয়ায় হাদীস শরীফের বাগান প্রস্ফুটিত হয়। বলা হয়ে থাকে তিনি ব্যতীত হাদীস শরীফে অন্য কারও সনদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হাদীস শরীফের সনদে কোন না কোনভাবে তাহার সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান।বিখ্যাত এই মুহাদ্দিসের রুহানি ফয়েজ অর্জনের জন্য তাহার মাজারে পাকে উপস্থিত হলে আমার নয়নে জল চলে আসে , জরাজীর্ণ অবস্থায় তাহার মাজারে পাক দেখে গায়ের চাদর দিয়ে পরিষ্কার করা আরম্ভ করলাম। মানুষ নামে কিছু হায়েনা মুসলমানদের কে শিরিক বেদাতের হাত থেকে বাঁচানোর অজুহাতে উম্মতে মুহম্মদীর এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের রওজা পাক কে পরিত্যক্ত করে রাখি। যাতে কোন মুসলিম উম্মাহ তাহার থেকে ফয়েজাত অর্জন করতে না পারে।
এক সময় আমাদের দেশেও( বঙ্গীয় অঞ্চলে) স্থানীয় আলেম-ওলামাদের কাছে কোরআন হাদিস ইসলামী জ্ঞান শাস্ত্রের উপর শিক্ষা অর্জন করত।অতঃপর হিন্দুস্তানের প্রখ্যাত আলেমের কাছে গিয়ে কোরআন, হাদিস, বিভিন্ন শাস্ত্রের উপর পাÐিত্য অর্জন করে পাগড়ি ও সনদ অর্জন করতেন। এইখান থেকে হিন্দুস্তানে কোরআন, হাদিস সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর পাÐিত্য অর্জন করতে হিন্দুস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন তাদের মধ্যে আমার বড় আব্বাজান কেবলা হযরত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস আল মাইজভান্ডারী অন্যতম। (তিনি আমার আম্মার দাদা শাহ-ই- দরবার শরীফ আনোয়ারা) তিনি হিন্দুস্তানে গিয়ে প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন আশরাফ আলী থানবীর প্রতিষ্ঠিত কানপুর মাদ্রাসা থেকে কোরআন-হাদিস সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর পান্ডিত্য অর্জন করেন। ২০০ বছরের অধিক পুরানো সনদটি সম্পূর্ণ হাতে লেখা। উক্ত সনদের নীচে থানবী সিল ও স্বাক্ষর করেন।
আধুনিক সভ্যতার সময়ে এসে সেই কষ্ট থেকে পরিএানের যাত্রা সূচিত হচ্ছে গত তিন দশক থেকে। চট্টগ্রামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাশেমি (রহমাতুল্লাহ আলাইহি) লেবাননের কয়েকজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিসের অনুরোধে দেশি ও বিদেশী ৪১ জন কে মহাদ্দেস হিসেবে সনদ প্রদান করেন।উক্ত অনুষ্ঠানে আনজুমানে রজবিয়ান নুরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা আবুল কাসেম নুরী (মাদ্দাজিলহুল আলী) কালু শাহ মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হক (জিল্লুহুল আলী) ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দেস মৌলানা নুরুল আবচার(জি: আ:)কে (নিচের দুইজন আমার সম্মানিত ওস্তাদ। ) মহাদ্দেস হিসেবে সনদ প্রদান করেন।
দীর্ঘ বিরতির পর ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা কাজী মইনুদ্দিন আশরাফী (ম: আ:) ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সম্মানিত শাইখুল হাদিস হিসেবে আজ শনি বার ২৪ শে ফেব্রæয়ারি ২০২৪সালে এসে ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অডিটোরিয়ামে ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের ছাত্রদেরকে সনদ ও পাগড়ী প্রদান করেন।( আমি অধমও হযরত ইমাম আশরাফি ( ম:আ:)একজন নগণ্য ছাত্র।)
তাহার দীর্ঘ জীবনে হাজার হাজার ছাত্রকে হাদীসের কিতাব সমূহ পড়ে যাচ্ছেন। অনেকে দেশও বিদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হিসেবে সুপরিচিত। আবার অনেকেই স্ব স্ব স্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত। এই অকুতোভয় সৈনিক সুন্নিয়তের জন্য মাঠে ময়দানে প্রতি নিয়ত লড়াকু সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। সর্বশেষ তিনি সকলের কাছে আদর্শের বাতিঘর ও বটে।
সুন্নিয়তের ক্রান্তি লগ্নে ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সব সময় সবার অগ্রভাগী । সুন্নিয়ত যখন ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই আলোর দিশা হয়ে সুন্নি জনতার সামনে উদ্ভাসিত হয় ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা। যেমনিভাবে বাতিলদের বিরুদ্ধে ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসার ভূমিকা। ঠিক তেমনিভাবে বাতিল ও মানব সৃষ্ট মতাদর্শের বিরুদ্ধে ইহ কালীন ও পরকালীন মুক্তির নিখুঁত দর্শন নিয়ে দেশবাসীর সামনে হাজির করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা। ইমামে আশরাফী শাইখুল হাদিস হিসেবে মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রদেরকে নিজে সনদ ও পাগড়ি দিয়ে ছোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসার গৌরময় অধ্যায়ে আরেকটি পলক যুক্ত করল। আল্লাহ তাহার হায়াতে, রিজিকে অফুরন্ত বরকত দান করুক। আমিন…
(এই টি লেখকের নিতান্তই অভিপ্রায়)
লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক