এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য ও আমাদের প্রত্যাশা

23

বিভাস গুহ

এসএসসি পরীক্ষায় পাসের সাফল্য এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা দেখে আশায় বুকটা ভরে গেল। যান্ত্রিক জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েও জীবন নামের রথটি যখন এগিয়ে চলেছে, নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং আর্থিক টানাপোড়নে যখন হতাশা এসে ঘিরে ধরেছে ঠিক তখনি এমন সাফল্যের সংবাদ তীব্র গরমে যেন শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিল। দুঃখের মাঝে যেন সুখের ছোঁয়া এসে আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে দিল। আমাদের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে ক্ষণিকের জন্য সবার মত আমিও হারিয়ে গেলাম আনন্দসাগরে। অভিনন্দন এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাইকে। আগামীর জন্য রইল শুভ কামনা। তোমাদের সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে এ কামনা সবসময়।
ভাবতেই ভালো লাগছে আমাদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য আনন্দের এবং গৌরবের। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত রাখতে পারে অভিভাবকদের সেদিকে নজর দিতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার মত পাবলিক পরীক্ষায় সাফল্য সত্যিকার অর্থে খুব বড় অর্জন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য। এ সাফল্যে উৎসাহ প্রেরণা যোগাবে আগামীদিনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। তোমরাই একদিন দেশকে নেতৃত্ব দিবে। তোমাদের মেধার প্রতিফলন ঘটবে নেতৃত্বে।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের সচেতনতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষকতা পেশায় থাকার সুবাদে এবং অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সেটা উপলব্ধি করছি প্রতিনিয়ত। আজ থেকে প্রায় পাঁচ দশ বছর আগেও মা সমাবেশ বা অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করলে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মা বা অভিভাবক উপস্থিত হত আর বর্তমানে অধিকাংশ অভিভাবক উপস্থিত হয়। শুধু তাই নয় মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সন্তানের লেখাপড়ার খোঁজ খবরও নেয় এবং ফলাফল প্রকাশের সময় অধিকাংশ অভিভাবক উপস্থিত হয়ে সন্তানের ফলাফল বিবরণী গ্রহণ করে থাকে। যেটা বিদ্যালয়ের জন্য যেমন সুখবর তেমনি সন্তানের লেখাপড়ার প্রতি সচেতনতা এবং যতেœরও বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক হিসেবে আমরা তাই চাই। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা যত বাড়বে শিক্ষার প্রতি সন্তানের আগ্রহ তত বাড়বে শিক্ষকদের শেখানোর আগ্রহ বাড়বে শিক্ষার মান বাড়বে শিক্ষার হার বাড়বে। আমরা শিক্ষকরা চাই অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসুক। সন্তানের সবল এবং দুর্বল দিক নিয়ে আলোচনা করে দুর্বল দিকের উপর আরো যতœবান হোক। অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে যত সম্পৃক্ত হবে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতি তত বৃদ্ধি পাবে। শিক্ষকদের মধ্যেও উৎসাহ উদ্দীপনা এবং প্রেরণা বৃদ্ধি পাবে।
এসএসসি পরীক্ষার সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে অভিভাবকদের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও শিক্ষার সে পরিবেশটা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের শূন্য পদগুলো দ্রæততার সাথে পূরণ করে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদানের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ সুবিধা এবং আইসিটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ দেয়া উচিত তবেই তারা নিজেদেরকে বিশ্বদরবারে মেলে ধরতে পারবে। শিক্ষাকে যুগোপযোগি করা মানে দেশের উন্নতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কারণ শিক্ষা জাতির মেরুদÐ। মেরুদন্ড সোজা থাকলে মানুষ যেমন চলাফেরা করতে পারে ঠিক তেমনি শিক্ষা যদি সঠিক পথে এগিয়ে যায় তবেই দেশও এগিয়ে যাবে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিকবিভাস গুহ