এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ

10

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ রবিবার থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষা নেয়া হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। আবশ্যিক ও চতুর্থ বিষয় বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গ্রæপভিত্তিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা হবে। এ লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। সকাল ১০ টা থেকে শুরু হবে পরীক্ষা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে এ বছর ২০৪টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে ১৫ হাজার ৭১৭ জন ছাত্র ও ১৫ হাজার ৩৫৬ জন ছাত্রীসহ মোট ৩১ হাজার ৭৩ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। মানবিক বিভাগ থেকে ২৩ হাজার ২২৬ জন ছাত্র ও ৪২ হাজার ২০ জন ছাত্রীসহ মোট ৬৫ হাজার ২৪৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৬ হাজার ৩১০ জন ছাত্র ও ২৮ হাজার ৪৯৩ জন ছাত্রীসহ মোট ৬৪ হাজার ৮০৩ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন।
গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৮৮ জন। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৩৪ জন। এবার চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৯ হাজার ৯৪৭ জন, কক্সবাজারে ২৫ হাজার ৯৩৭ জন, রাঙ্গামাটিতে ৯ হাজার ৩৭২ জন, খাগড়াছড়িতে ১০ হাজার ৬৩৭ জন, বান্দরবানে ৫ হাজার ২২৯ জন পরীক্ষা রয়েছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী পূর্বদেশকে বলেন, সার্বিকভাবে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা বন্ধের দিনেও অফিস চালু রেখেছি। শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানে শিক্ষা বোর্ডে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের প্যাকেটে ভরে প্রশ্নপত্র সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ট্রেজারিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব প্যাকেটের ওপর আরেকটি নিরাপত্তা প্যাকেট ‘নিরাপত্তা ট্যাগ’ দিয়ে মোড়ানো হয়। প্রতিকেন্দ্রে দুই সেট প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার আগে মেসেজে যে সেটের কোড পাঠানো হবে। ঠিক সেই সেটের প্রশ্নই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। আমি মনেকরি এতে করে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না।
কেন্দ্র পরিদর্শনে থাকবেন শিক্ষাবোর্ড ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভিজিল্যান্স টিম: এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১২টি গঠন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে ৬০টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে থেকে কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ পূর্বদেশকে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে দুই ধরনের মোট ৭২টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে ১২টি টিম এবং দূরবর্তী জেলার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে আরও ৬০টি ভিজিল্যান্স টিম। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। সকাল দশটায় পরীক্ষা আরম্ভ হবে। তবে, পরীক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। শিক্ষাবোর্ড থেকে সেট কোড পাঠানোর পর কেন্দ্র প্রশ্নপত্র খুলতে পারবেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ সর্তকতা রয়েছে।

আসন বিন্যাস: আবশ্যিক বিষয় থাকলে যে কেন্দ্রে ১ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতো সেখানে এবার মাত্র ২০০ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে থাকবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আসন বিন্যাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রের বেঞ্চগুলোতে ইংরেজি বর্ণ ‘জেড’ আকারে বসানো হবে পরীক্ষার্থীদের। কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাইকে মুখে মাস্ক দিয়ে ঢুকতে হবে। প্রবেশ ফটকে রাখা হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব রেখে চালাতে হবে যাবতীয় কার্যক্রম।

মানবণ্টন ও সময়: এসএসসিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত সহ আবশ্যিক বিষয় ও চতুর্থ বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিতে হবে না। কেবল গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এছাড়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রতি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের বদলে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। তবে ৫০ নম্বরকে ১০০ নম্বরে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষার সময়ও হবে অর্ধেক অর্থাৎ তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টায়।

প্রশ্নপত্র কেমন হবে: প্রশ্নপত্র হবে আগের নিয়মেই। তবে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। যেমন আগে যেখানে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, সেখানে এখন সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে উত্তর দিতে হবে চার-পাঁচটির। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
অন্য বিষয় যেভাবে মূল্যায়ন হবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসএসসি পরীক্ষায় গ্রæপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি, ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে জেএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। এসএসসি (ভোকেশনাল)-এ জেএসসি ও নবম শ্রেণির ফল মূল্যায়ন করা হবে।

আবশ্যিক বিষয়ে নেওয়া হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট: করোনার কারণে আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া না হলেও তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিখন জ্ঞান অর্জন করতে এ অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শুরু করা হয়। এসএসসিতে দুই স্তরে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট এর কাজ করে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। এই সময়ে হয়নি কোনও পাবলিক পরীক্ষা।