এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা পরিবেশ ও যাতায়াত নির্বিঘ্ন হোক

11

আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে একযোগে শুরু হচ্ছে ২০২২ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরীক্ষা। পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে। এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। সারা দেশে ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মোট তিন হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেবে।
প্রথমদিকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ হলেও পরে সার্বিক দিক বিবেচনা করে যানজট এড়াতে বেলা ১১টা থেকে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়। কর্মদিবসে অফিস আদালত খোলা থাকবে। সকালে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম ও অন্যন্য বিভাগীয় শহরে যানজট নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, এসব বিবেচনায় পরীক্ষার সময় নির্ধারণ যথার্থ হয়েছে বলে মনে হয়। তবে এসময়ে যে যানজট থাকবেনা তা নয়; কিন্তু পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘœ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে আন্তরিকতার সাথে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও সচেতনতার সাথে সময় নিয়ে কেন্দ্রের উদ্দ্যেশ্যে বের হওয়া জরুরি। আমরা জানি, প্রতি বছর ফেব্রæয়ারি মাসে এসএসসি ও এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও গত বছর এবং এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষ দুটি পিছিয়ে যায়। করোনা সংক্রমণ কমে আসার প্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সিলেটসহ দেশের অনেক অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে আবারও পিছাতে হয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসে তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দুই ঘণ্টা পরীক্ষা নেওয়া হবে। করোনার কারণে দ্বিতীয় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করা হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি। এক মাস পর ২২ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া হয়।
এদিকে, সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৬ নভেম্বর। এবার সকাল ও বিকেল দুই ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সকালের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকেলের পরীক্ষা দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এবার পরীক্ষা যাতে কোনরকম ফাঁস কেলেঙ্কারীতে না পড়ে সেইজন্য প্রশ্ন আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু নির্দেশনা জারি করা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রথমত, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের প্যাকেটে ভরে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পাঠানো হবে। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক প্রবেশ করবে।
সূত্র জানায়, গতবারের তুলনায় ১১ হাজার কম পরীক্ষার্থী নিয়ে এ বছর চট্টগ্রামে শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স্পেশাল ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘এবারের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শনিবার বন্ধের দিনেও খোলা রাখা হয়েছে বোর্ড অফিস। এছাড়াও ৮টি স্পেশাল ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৬০ টি সাধারণ ভিজিল্যান্স টিম।’ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার পরীক্ষার্থী ২১৩টি কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করবে।
গেল বছর ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। সে হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ১১ হাজার ১২২ জন। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটির ৭ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থী ২১টি কেন্দ্রে, খাগড়াছড়ির ৮ হাজার ৬৬০ জন শিক্ষার্থী ২৩টি কেন্দ্রে এবং বান্দরবানের ৪ হাজার ৪৩ জন শিক্ষার্থী ১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে। বরাবরের মতো এবারও ছেলে পরীক্ষার্থীর চেয়ে মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। আমরা আশাকরি, সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্বিঘেœ শেষ হবে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় সংকটের কারণে শিক্ষায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। শিক্ষার্থীরা বারবার পরীক্ষা পিছানোর কারণে মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়েছে, তা বলার অবকাশ নেই। সংগত কারণে এর প্রভাব পরীক্ষায় পড়বে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বোর্ড, কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, পরিদর্শকমÐলী ও শিক্ষকদের সতর্কতা ও সচেতনভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করতে হবে। এমন কোন আচরণ করা কাম্য নয় যে, যাতে পরীক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। সকল পরীক্ষার্থীর জন্য শুভকামনা।