এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিকল্প কৌশল অবলম্বন জরুরি

11

চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসএসসি সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০২১ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হলেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নাম্বার গড় অনুসারে অটোপাস দেওয়া হয়। এর পর বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যাদেরকে এইচএসসি উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থাও এখনো করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ থাকার কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা ২০২১ এর নিয়মিত সময় গড়িয়ে যেতে চলেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ বিগত ১৩ জুন খুলে দেয়ার ঘোষণা থাকলেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির বরাতে ৩০ জুন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। যার কারণে এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আবার অনিশ্চয়তার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এদেশে নানা কৌশলে নির্বাচন হতে শুরু করে সব ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন ক্লাসের কোটির অধিক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারামুক্তি দিবসের আলোচনা সভা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন পরীক্ষার বিকল্প চিন্তার কথা। সীমান্ত জেলাগুলোতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পরীক্ষার বিকল্প চিন্তার বিষয়টি অবান্তর নয়।
শিক্ষামন্ত্রীর বিকল্প চিন্তা যদি পরীক্ষাবিহীন পাস দেওয়া হয়, তা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের; এমনিতেই দেশের শিক্ষা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। তার উপর গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার মতো পুনরায় অটোপাসের কৌশল করা হলে তা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাসের ইতিহাসে আরো একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করবে। এমনিতে পরীক্ষার্থীরাসহ অন্যান্য ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার চর্চা হতে অনেক দূরে অবস্থান করছে। তার উপর তাদের একাংশকে বিনাপরীক্ষায় পাস দেয়া সমীচীন নয়। একটি সময় জাতিকে এই সকল মান যাচাইহীন পাস করা ব্যক্তিদের কলঙ্কিত সার্টিফিকেটের কুফল সমগ্র জাতিকে ভোগাবে। দেশের সকল সেক্টর কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে চলতে পারলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারবে না এমন সরকারি সিদ্ধান্ত অমূলক। অনলাইন পদ্ধতি কিংবা অন্যান্য পন্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সাথে জড়িয়ে রাখার কৌশলসমূহ মোটেও সন্তোষজনক বিবেচিত হয়নি কোন বিবেকবান মানুষের কাছে।
সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণজনিত কৌশল অবলম্বন জাতির জন্য মঙ্গলজনক বলে অভিমত শিক্ষাবান্ধব সকল নাগরিকের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কৌশল অবলম্বন অবশ্যই সম্ভব। মন্ত্রণালয় আন্তরিক হলে বিষয়টি খুবই সহজ। আমরা মনে করি, সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় পরীক্ষার বিকল্প না খুঁজে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে বিকল্প সন্ধান করে শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার মান রক্ষায় এগিয়ে আসুক। একটি উপজেলায় ২/৩/৪/৫টি পরীক্ষা কেন্দ্র থাকে। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাবলিক পরীক্ষা হয় না। সুতরাং পরীক্ষা নেয়ার বিকল্প কৌশল অবলম্বন খুব একটি জটিল বিষয় নয় এমন ধারণা শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।