এসএসএফকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে

8

 

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফ সদস্যদের প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে তাদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্পেশাল এসএসএফের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, পরিবর্তনশীল জগতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মানুষের জীবন গতিশীল হচ্ছে, কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। সেই সাথে সাথে অপরাধীরা ও জঙ্গিরাও সুযোগ নিচ্ছে। কাজেই বিজ্ঞান বা আধুনিকতা আমাদের যেমন সুযোগ দেয় সেই সাথে সাথে জীবনের জন্য ঝুঁকিও সৃষ্টি করে- এটা হলো বাস্তবতা।
সরকারপ্রধান বলেন, সেক্ষেত্রে আমি, আমাদের সব সময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এই বিশেষ বাহিনী, তারাও সেভাবে প্রশিক্ষিত হবে এবং তাদের দক্ষতাও সব সময় বৃদ্ধি পাবে। সেই জন্য দেশে বিদেশে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, অন্যান্য দেশে কীভাবে ট্রেনিং হয় সেগুলো দেখা, সেগুলো যেমন আমরা গড়ে তুলেছি, সেই সাথে ভবিষ্যতে আরও সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। খবর বিডিনিউজের।
এসএসএফ সদস্যদের দক্ষতার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা তাদের পরিবারববর্গ না, বিদেশি অতিথিরাও যখন আসেন, তাদের নিরাপত্তা দেওয়াটা এটা একটা কঠিন দায়িত্ব।
তবে আমি ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই, যখনই যিনি এসেছেন এবং আমাদের এসএসএফ সদস্যরা এত চমৎকারভাবে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন যে প্রত্যেকেই তাদের প্রশংসা করেছেন এবং সকলেই দক্ষতা এবং তাদের আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এসএসএফ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে তাদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটি দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধকে যারা সমর্থন করতে পারেনি, যাদেরকে পরাজিত হতে হয়েছিল বাঙালির হাতে, তারা এই হত্যার মধ্য দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধগ্রহণ করেছিল।
জাতির পিতাকে যখন হত্যা করা হয়, তখন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিল তারা তাদের টানা ছয় বছর দেশে ফিরতে দেয়নি। পরে জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
সেই সময় জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ও খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে যে পুরস্কৃত করা হয়েছিল, তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, যার মধ্যে ওই সময়ে ১১ হাজারের মতো সাজাপ্রাপ্ত ছিল ও ২২ হাজার আসামির বিচার শুরু হয়েছিল।
১৯৭৫ এর পরে যেই সেনা সদস্য ক্ষমতায় আসে, সে তাদের সবাইকে মুক্ত করে দেয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে, খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করে। সেই পরিস্থিতিতে আমি দেশে ফিরে আসি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যারা আমার বাবা-মা, আমার ছোট্ট ১০ বছরের ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করেছে যে কোনো মুহূর্তে আমি হয়ত ঘাতকের আঘাত আমার জন্য সব সময় প্রস্তুত আমি সেটা জানতাম। তারপরও আমি ফিরে এসেছিলাম একটা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য, যেই স্বপ্নটা দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক এই বাংলাদেশে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে, স্বাধীনতার চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, স্বাধীনতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সেই সাথে সাথে ঘাতকদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সেই সময়ে বিচার চাওয়ারও অধিকার ছিল না।বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ওই পরিস্থিতিতেই জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। জনগণই ছিল আমার একমাত্র শক্তি। আর ছিল আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ২১ বছর পর সরকার গঠন করি।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের পক্ষ থেকে ১০০টি গৃহহীন পরিবারের জন্য ২ কোটি টাকা একটি ব্যাংক ড্রাফট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।
মুজিববর্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এসএসএফ এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সম্পাদিত ‘মুজিব-বাঙালি-বাংলাদেশ’ নামে একটি ই-বুক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।