এসএমএস পাওয়া চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া শুরু

43

মনিরুল ইসলাম মুন্না

দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা পুরনো ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বর্তমানে চট্টগ্রামের আবেদনকারী চালকদেরকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) চট্টগ্রাম বিআরটিএ শাখার ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, লাইসেন্স ছাপা হলে আবেদনকারী চালককে এসএমএস বা মোবাইল বার্তার মাধ্যমে সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী চালকরা আমাদের কার্যালয়ে এসে বুথ থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে লাইসেন্স বিতরণের খবর পাওয়ার পর প্রতিদিন শত শত চালক ভিড় জমাচ্ছেন। শুধুমাত্র এসএমএস প্রাপ্তদের কার্ড আমাদের কাছে আসছে। বাকিগুলো এখনও প্রিন্ট হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যে সেগুলোও আমাদের হাতে চলে আসবে।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর থেকে এসব লাইসেন্স প্রিন্ট শুরু করে সেনাবাহিনীর অধীনে পরিচালিত মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। পরে ১১ অক্টোবর বিআরটিএ সদর দপ্তর থেকে গ্রাহকের মাঝে কিছু লাইসেন্স বিতরণ করা হয়। তখনও চট্টগ্রামের কোনো কার্ড প্রিন্ট হয়নি। চলতি মাসের শুরুতে অর্থাৎ নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে চট্টগ্রামের গ্রাহকদের কার্ড প্রিন্ট শুরু হয়। এরপর থেকে বিতরণও শুরু হয়। যাদের মোবাইলে এসএমএস যাচ্ছে, তারাই কেবল স্মার্ট লাইসেন্স পাচ্ছেন।
এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে লাইসেন্স নিতে আসা গ্রাহক মমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ২০১৯ সালে লাইসেন্স করতে দিয়েছিলাম এক দালালের মাধ্যমে। আবেদনে আমার নম্বরের পরিবর্তে তার নম্বর যুক্ত করা হয়। বর্তমানে দালালের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। এখন আমার লাইসেন্সের কি হবে বুঝতে পারছি না।
বিআরটিএ সদর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স কার্ড প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মেট্রো সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যিনি যে অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন তিনি সেই অফিস থেকে লাইসেন্স পাবেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স দেয়া শেষ করা হবে বলে আশা করছেন বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে বিআরটিএ’র ৫৪টি মাঠ পর্যায়ের অফিস রয়েছে। এগুলোর অধীনে মোট ৭০টি সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট রয়েছে। এসব সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আমাকে একটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ২০১৯ সাল থেকে চলমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভোগান্তি নিরসন করতে হবে। পাশাপাশি নতুনভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া সাজাতে হবে। আমি যোগদানের পরে করোনা মহামারিতে অনেকটা সময় নষ্ট হলেও আপ্রাণ চেষ্টা করেছি দেশের সাধারণ চালকরা যেন আর ভোগান্তিতে না থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরে ৭-১৫ দিনের মধ্যে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছি। প্রায় ৩ বছরের মতো ঝুলে থাকা সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্সও প্রিন্ট করা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স দ্রæত সময়ে প্রদান এবং গ্রাহক ভোগান্তি কমানোর জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) স্মার্ট কার্ড প্রস্তুতের কাজ দেওয়া হয়েছে। তারা সুন্দরভাবে লাইসেন্স প্রিন্ট করে চালকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
প্রায় দুই বছর ধরে বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ বন্ধ ছিল। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাননি প্রায় সাড়ে ১২ লাখ চালক। তখন মোটরযান চালানোর অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ ব্যবহার করেছেন চালকরা। এ নিয়ে সড়কে তাদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ড’-এ ছাপা ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড’। গত বছরের ২৯ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আঙুলের ছাপ নেওয়া বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে।
এর আগে ‘টাইগার আইটি’ ২০১৬ সালে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের পর লাইসেন্সের আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের আগেই লাইসেন্স ফুরিয়ে যায়।