এলো সেই প্রিয় মাস-মাহে রবিউল আউয়াল

4

 

আবারও এলো সেই প্রিয় মাস, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর শুভাগমনের সম্মানিত মাস-রবিউল আউয়াল। যে মাস এলে মুসলমানের অন্তর ভরে যায় প্রশান্তিতে, কর্ণকুহরে ভেসে আসে প্রিয় নবীর শানে নাতে রসুলের মোহনীয় সুর, দরুদ ও সালামের ধ্বনিতে হৃদয় হয়ে ওঠে ভক্তিতে ভরপুর। রবিউল আউয়াল এমনই এক মাস, যে মাস এলে মুমিন বান্দাদের ঘরে ঘরে পড়ে যায় উৎসবের ধুম, পাড়ায় পাড়ায় বসে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপনের বর্ণাঢ্য আয়োজন, নগর-গ্রাম সাজতে থাকে জশনে জুলুসের বর্ণিল সাজে। রবিউল আউয়াল এমনই মাস যে মাস এলে আশেকে রাসুলের অন্তরে সৃষ্টি হয় ঈমানি জজবা, মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপনে চলে প্রস্তুতি। প্রতিবছর সে প্রস্তুতি শুরু হয় রবিউল আউয়াল শুরুর আগেই। এ পবিত্র মাসকে স্বাগত জানিয়ে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ৬ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান মসজিদ জমিয়তুল ফালাহ ময়দান থেকে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ-চট্টগ্রাম মহানগর শাখা এ শোভাযাত্রার আয়োজক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি চাঁদ তারকা খচিত তরিকতের সবুজ পতাকা আর নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে আশেকে রাসুলেরা অংশ নেন এ শোভাযাত্রায়। শুরুতে ‘স্বাগতম হে মাহে রবিউল আউয়াল’ লেখা অক্ষরের সারি নিয়ে একদল মাদ্রাসা ছাত্র।
সড়ক প্রদক্ষিণ যখন করছিল এ শোভাযাত্রা তখন মাইকে বাজছে হৃদয়হরণকারী নাতে রাসুল (দ.)। র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের নারায়ে তাকবির-আল্লাহ আকবার, নারায়ে রেসালাত-ইয়া রাসুলাল্লাহ (দ.), নারায়ে গাউসিয়া-ইয়া গাউসুল আজম দস্তগীর, শাহেনশাহে ছিরিকোট-জিন্দাবাদা জিন্দাবাদ ¯েøাগানে মুখর হয়ে উঠছিল রাজপথ।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ-তরিকতভিত্তিক আধ্যাত্মিক এ সংগঠনটি করোনাকালে পরিণত হয়েছে গণমানুষের সংগঠনে। গত দেড়বছরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের দাফন-কাফন আর অক্সিজেন সেবায় যেভাবে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন সংগঠনের কর্মীরা তাতে এটি আর একক কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। করোনার কঠিন উত্তাপে যখন পুরো পৃথিবী দিশেহারা তখন যেমন এর কর্মীরা মাঠে ছিলেন, করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় অন্যরা যখন তাদের কর্মকাÐ গুটিয়ে ফেলেছে, প্রয়োজন না তাকায় বন্ধ করে দিয়েছে হাসপাতাল, সবাই যার যা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তখনও গাউসিয়া কমিটি আগের মতোই প্রতিদিন তাদের দাফন-কাফন সেবা নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, আনাচে-কানাচে ছুটে চলেছেন।
মূলত, বাহ্যিক (দুনিয়াবি) কোনো সাফল্য বা স্বার্থের চাহিদা এ সংগঠনের কর্মীদের নেই বলেই এমন নিরবচ্ছিন্ন সেবা তারা দিয়ে যেতে পারছেন। যে কোনো কাজে যখন স্বার্থ এসে দাঁড়ায় তখন সে কাজ বেশিদিন টিকে না, শুরু হয় স্বার্থের দ্ব›দ্ব। কিন্তু গাউসিয়া কমিটির কর্মীদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি অর্জন, মুর্শিদের (পীর) অনুগ্রহ পাওয়া তাই তরিকতের যে কোনো কাজে ডাক আসার সাথে সাথেই ছুটে চলেন তারা।
রবিউল আউয়ালকে স্বাগত জানিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন নতুন কিছু নয়, অনেক বছর ধরেই গাউসিয়া কমিটিসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন এটির আয়োজন করে আসছে। প্রিয় নবীর জন্মমাসকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয় জশনে জুলুস অনুষ্ঠানের। সেটিও আমরা লক্ষ্য করছি এখন। চট্টগ্রাম নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো এরই মধ্যে সাজতে শুরু করেছে। পতাকা-ফেস্টুন-ব্যানার-লাইটিং হঠাৎ বাইরে থেকে কেউ এলে পুরো নগরকেই ‘বিয়ে বাড়ি’ বলে ভুলও করতে পারেন। চারিদিকে উৎসবের আমেজ।
সেই আমেজ রাস্তা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে অনলাইনের নানা পেজে নানা ইভেন্ট। এসব কার্যক্রমে তরুণ-কিশোরদের সরব উপস্থিতি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। এবার আওলাদে রসুলের (দ.) ছদারতে বর্ণাঢ্য জশনে জুলুসের অপেক্ষা। সে অপেক্ষা আরেক আনন্দের, খুশির। মুরিদেরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে কখন আসবেন তিনি, করোনার কারণে এবারের অপেক্ষাও দীর্ঘ। তবু, সব বাধা কাটিয়ে এবার বাংলাদেশে আসছেন আওলাদে রাসুল (দ.), হযরতুল আল্লামা সাবের শাহ (মাজিআ), যিনি বাঙালীদেও কাছে পীরে বাঙাল হিসেবে পরিচিতি।
প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের এ জশনে জুলুস এখন আর চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক আগেই চট্টগ্রামের গন্ডি ছাড়িয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে জুলুসের সৌন্দর্য্য। বহির্বিশ্বেও জুলুসের বর্ণাঢ্য আয়োজন চোখে পড়ার মতো। এত নান্দনিক আর মনকাড়া আয়োজনের জন্য অপেক্ষা না করেই বা উপায় কী প্রেমিকদের। প্রেমিক মাত্রই প্রেমে মাতোয়ারা। রাসুলের প্রেমিকেরা তাই সারাবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন এ দিনটির, যেদিন ধরাধামে এসেছিলেন প্রিয় নবী। আর সারাদুনিয়া গেয়ে উঠেছিল, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়, আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।’
লেখক : সাংবাদিক