এলোমেলো ভাবনা

17

 

রাষ্ট্র বা সমাজের দর্পণগুলোতে যেমন: প্রিন্ট ও ইলোক্ট্রনিক মিডিয়া, ফেইসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদিতে প্রতিনিয়তই যা দেখছি মনে হয় তার ৯৯% নেগেটিভ নিউজ যাতে নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মত কিছুই নেই। হয়তোবা আমার চোখ বা মন পজেটিভ / নেগেটিভ নিউজ সেক্রিকেট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজ বা রাষ্ট্রের দর্পণগুলো রাষ্ট্র বা সমাজকে পজেটিভ ভাবেই হোক বা নেগেটিভ ভাবে হোক অতি সহজেই বদলে দিতে পারে। যা অন্য কোন উপায়ে যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। দর্পণ গুলো ঠিকই আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের নাগরীকদের মনমানসিকতাকে বদলেও দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। কেউ অনুভব করতে পারছে কেউ বা পারছে না, আবার কেউ অনুভব করেও চুপ করে বসে রয়েছে। অতি স¤প্রতি (২/১ দিনের মধ্যে) দেশে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সংবাদগুলোর মধ্যে ৩টি সংবাদ আমাকে আকর্ষিত করেছে:
১। অনৈতিক কর্মকাÐে জড়িত থাকার অপরাধে দেশের এক অভিনেত্রীর ২৭ দিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পেয়ে রাজসিক শো ডাউন
২। না ফেরার দেশে চলে গেলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম (যার মাধ্যমে রাব্বুল আলআমিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান অক্ষতাবস্থায় এবং ঐ বিমানের ১২৪ জন যাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন )
৩। ওঈউউজই -এর সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড.ফেরদৌসী কাদরী যিনি কলেরা টিকা নিয়ে গবেষণা ও সাশ্রয়ী দামে সহজলভ্য করে লাখো মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টায় অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হলেন
সা¤প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া এই ৩টি উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে বিগত ২/৩ দিন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোন সংবাদটি সবচেয়ে বেশী কাভারেজ পেয়েছে? যদি ভুল না বলে থাকি মনে হয় ঐ অভিযুক্ত অভিনেত্রীর জামিনে মুক্তির সংবাদটি।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেল লাইভ স¤প্রচার করেছে জেলগেট থেকে অভিনেত্রীর বাসা অবধি, প্রিন্ট মিডিয়া করেছে আলোকিত কাভারেজ, এমনকি এক টিভি চ্যানেলে রাত ৮ টার মূল সংবাদের প্রথমেই দেখলাম প্রায় ৭/৮ মিনিট বিশেষজ্ঞ এনে ঐ অভিযুক্ত অভিনেত্রীকে নিয়েই আলোচনা। তিনি হাজতে কিভাবে ছিলেন, আদালতের নিদ্দেশনা মোতাবেক তার সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, হাতে মেহেদী দিয়ে লিখায় কি মেসেজ এবং কাদের এ ম্যাসেজ দিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ ক্যাপ্টেন নওশাদ এর সেই দুঃসাহসিক কাজ বা ড .ফেরদৌসির যুগান্তকারী অবদান নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া, ইলোক্ট্রনিক মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি তেমন কোন আলোচনা কারো চোখে পড়েছিল?
দেশের স্বার্থে যেখানে ক্যাপ্টেন নওশাদ এবং ড. ফেরদৌসি বিভিন্ন মিডিয়া এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় জাতীয় বীর হিসেবে হাইলাইট হওয়ার কথা। যা দেখলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জন্মাতো মানবতা ও দেশাত্মবোধ। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়াগুলো কর্তৃক হাইলাইটেড করা হলো অনৈতিক কর্মকাÐের দায়ে অভিযুক্ত সেইঅভিনেত্রীকেই
ওই অভিনেত্রীকে এমন হাইলাইট এর কারণ আমার অজানা, হয়তোবা সেই অভিনেত্রী দেশ ও দশ এর জন্য অনেক অনেক বেশী অবদান রেখেছেন বা রেখে চলছেন যে অবদান গুলোর কাছে বীর পাইলট এবং ড. ফেরদৌসির অবদান অতি নগন্য হয়ে যাওয়ায় মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। দেশ ও দশের কল্যাণার্থে অভিযুক্ত সে অভিনেত্রীর কোন দৃশ্যমান অবদান যদি না থাকে তবে মিডিয়াগুলোর এহেন হাইলাইট দেশ ও দশের জন্য শুভ কি অশুভ?
কোনরূপ দৃশ্যমান অবদান ব্যতিরেকে কাউকে যদি মিডিয়াগুলো এমন হাইলাইট করে তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিকট ভুল ম্যাসেজ যাবে মনে হয়। ফলশ্রæতিতে পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই দেশ গঠনের প্রকৃত কারিগর হওয়ার উৎসাহ হারিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তার দিকেই ধাবিত করবে নিজেকে। ফলে দেশ ও জাতি হবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
মিডিয়ার পজেটিভ ভূমিকা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সহজেই দেশাত্ববোধে উদ্ধুদ্ধ করতে পারে। নেগেটিভ ভুমিকায় পরবর্তী প্রজন্ম দেশপ্রেমে আত্মনিয়োগের উৎসাহ হারাবে। আর মিডিয়াগুলোকে পজেটিভ ভূমিকায় আনতে ব্যর্থ হলে নতুন প্রজন্মের কাছে পূর্ববর্তী প্রজন্ম হিসেবে আমাদের পেতে হবে ধিক্কার। আজ ক্যাপ্টেন নাওশাদ ডা. ফেরদৌসির
বুঝেও না বুঝে বসে থাকার ভান করা প্রকারান্তরে মিডিয়াগুলোর এহেন কর্মকেই সমর্থন করা। তাই দায়বদ্ধতা থেকে এতদপ্রসংগে কিছু লিখে কিছুটা হলেও নিজে দায়মুক্তি নিলাম। ইচ্ছে করলে কিছু লিখে আপনিও দায়মুক্তি নিতে পারেন।
স্যালুট ক্যাপ্টেন নওশাদ এবং ড. ফেরদৌসী ম্যাডাম।
রাব্বুল আলামিন যেন ড. ফেরদৌসি ম্যাডামকে সুস্থ এবং নিরাপদে রাখেন এবং ক্যাপ্টেন নওশাদকে তাঁরই মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমিন।।