এলপিজির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কতটা ভোক্তা পর্যায়ে?

10

ফারুক আবদুল্লাহ

পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন বাকলিয়ার বাসিন্দা ইয়াছমিন আক্তার। তিনি বলছিলেন, যেভাবে গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাতে সংসার চলা কঠিন হয়ে পড়বে। চাপ বাড়বে সংসারের বাজেটের উপর। কারণ বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এর সাথে এটাও যোগ হয়েছে। এভাবে যদি সবকিছুর দামও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের তো খুব কষ্ট হয়ে যাবে। একইভাবে বহদ্দারহাটের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলছেন, মাসে মাসে গ্যাসের দাম বাড়ছে। দাম বাড়লে ব্যবহার যে কমাবো সেই সুযোগ তো নেই। কারণ বাসায় যা তা তো লাগবেই। এভাবে দাম বাড়ানো হলে চলা কষ্ট হয়ে যাবে। চকবাজার এলাকার চা বিক্রেতা মো. নজরুল বলেন, দোকানে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করি। গ্যাস শেষ হওয়ায় কিনতে গিয়ে দেখি দাম বেড়েছে। আগে যে দামে গ্যাস কিনতাম এখন তা অনেক বেড়েছে।
এদিকে গত রবিবার (১০ অক্টোবর) থেকে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির মূল্য প্রতি কেজিতে প্রায় ১৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা আগের দরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। প্রতি কেজি এলপিজির মূল্য আগের ৮৬ টাকা ০৭ পয়সা থেকে বেড়ে ১০৪ টাকা ৯২ পয়সা হয়েছে। এর ফলে ১২ কেজির একেকটি সিলিন্ডারের মূল্য আগের ১ হাজার ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১২৫৯ টাকা। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির দাম ৫০ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে হচ্ছে ৫৮ টাকা ৬৮ পয়সা।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল থেকে চার মাসে চার বার এলপিজির দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের কারণে এই বছরেই দুইবার শুনানি করে দাম বৃদ্ধি করা হলো।
জানা যায়, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে রান্নার কাজে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন গ্রামীণ এলাকাতেও এই সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। শিল্প ও আবাসিক মিলিয়ে বছরে দেশে ১২ লাখ মেট্রিকটনের বেশি এলপিজি ব্যবহৃত হয়। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪১ লাখ পরিবার এলপিজি ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করতেই এই মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। গত এপ্রিলে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
কমিশনের ভাষ্যমতে, কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির নতুন দাম ঠিক করা হয়েছে। তা হলো-গত এপ্রিলে যখন গ্যাসের দাম ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা নিয়ে এলপিজি অপারেটরদের কিছু আপত্তি ছিল। আগের দাম যেহেতু গণশুনানি করে নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাই তাদের আপত্তির পরে গত মাসের ১৪ তারিখে একটা গণশুনানি করা হয়েছিল। আরেকটা কারণ হলো, আন্তর্জাতিকভাবে সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সিপি) প্রতি মাসে ঘোষণা করা হয়, সেটা প্রায় প্রতিমাসেই ওঠানামা করে। তাই আমাদেরও সেটার সঙ্গে মিল রেখে মূল্য ঠিক করতে হয়। এসব কারণে নতুন করে দর নির্ধারণ করতে হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংস্থা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দর সমন্বয়ের কথা বলা হলেও বাংলাদেশে এলপিজির দাম নির্ধারণে ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলছেন, ব্যবসায়ীরা যেভাবে পরিবর্তনটা চেয়েছে, এই মূল্যহারের পরিবর্তনে সেটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু ঊর্ধ্বগতি আছে, তার সাথে দর সমন্বয় করতে হবেই। কিন্তু যেসব কারণ দেখিয়ে গ্যাসের দর বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। আর শুধু সিপির (সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস) বাইরে যেভাবে বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের ইপ্সিত বেশি বেশি মুনাফা লাভের প্রত্যাশা পূরণ করা হচ্ছে, এই দুইটা মিলিয়ে বলা যায় ভোক্তারা ক্রসফায়ারে আছে।
একইভাবে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার গণশুনানীতে ক্যাবসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত উপেক্ষা করেছে, তা অনাকাক্সিক্ষত। আর সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দেয় সে দামে ভোক্তারা গ্যাস সিলিন্ডার পায় না। তাই নির্ধারিত দামে গ্যাস সিলিন্ডার ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।