এমপিওভুক্তি কী ও তাতে কার লাভ?

45

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে বহুদিন ধরে শিক্ষক কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। গত প্রায় ১০ বছর ধরে নতুন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেনি সরকার। অবশেষে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা এলো : প্রায় ৩,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দেয়া হবে।
এমপিওভুক্তি আসলে কী? মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ যে অর্থ সরকার দিয়ে থাকে তাকে ইংরেজিতে বলা হয় মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল অনুযায়ী এই সহায়তা দেয় সরকার।
শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান আলম সাজু বলছিলেন, সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন পান একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। তাতে প্রধান শিক্ষকের বেতন দাঁড়ায় ২৯ হাজার টাকা। একজন সাধারণ শিক্ষকের বেতন ১৬ হাজারের মতো। এর বাইরে রয়েছে বাড়িভাড়া হিসেবে এক হাজার টাকা, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা।
ঈদ উৎসব ভাতা শিক্ষকদের জন্য বেতনের ২৫ শতাংশ আর কর্মচারীদের জন্য বেতনের ৫০ শতাংশ। পহেলা বৈশাখেও একই পরিমাণে উৎসব ভাতা দেয়া হয়ে থাকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সরকার প্রায় তিন হাজার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে আবেদন পয়েছিলো ৯ হাজারের বেশি। সরকারের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তাতে কোন রকমে পাঠদান করলেই হবে না। এমপিও সুবিধা পেতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।
মো. শাহজাহান আলম সাজু বলছেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাশের হার অনুযায়ী সেটি নির্ধারিত হয়ে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী এমপিওভুক্ত হতে হল কলেজ পর্যায়ে অন্তত ৬০ জন পরীক্ষার্থী থাকতে হবে।
মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে তা ৪০ জন। কিন্তু যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পাশের হার থাকতে হবে। মাদ্রাসার জন্য তা ৬০ শতাংশ।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী নতুন ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলো বাদ দিলে বর্তমানে ২৬ হাজারের কিছু বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাতে রয়েছেন পাঁচ লাখের মতো শিক্ষক ও কর্মচারী। এই অর্থবছরে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমপিও সুবিধা হিসেবে এক হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। গত অর্থ বছরে তা ছিল এর অর্ধেকের মতো।
এমপিও মূলত শিক্ষকদের বেতন ভাতার বিষয়। তাতে শিক্ষকরা পাঠদানে আরও মনোযোগী হওয়ার প্রণোদনা পান কিনা, শিক্ষার মান উন্নয়ন হয় কিনা সেনিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক গোলাম ফারুক বলছেন, শিক্ষকদের সাহায্য করা মানেই শিক্ষার মান উন্নয়নে সাহায্য করা। তাকে তো বেঁচে থাকতে হবে?
অন্যদিকে শাহজাহান আলম, শিক্ষক যদি খেয়ে পরে মান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে না পারেন, তাহলে সে ভালো করে পাঠদান কিভাবে করবে?
তবে শিক্ষা বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন-এর প্রধান রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, এমপিওভুক্ত হলেই শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে তার নিশ্চয়তা কিন্তু কেউই দিতে পারছে না। এমপিওভুক্ত হওয়ার পরেও অনেক বিদ্যালয় ভালো ফলাফল করতে পারে না।
মন্ত্রণালয়ে দেন-দরবার, রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রাপ্যতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এতদিনে অনেক প্রতিষ্ঠানেরই এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা। এই দীর্ঘ দিনে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের একটা বৈষম্য তৈরি হয়েছিলো। সেই অর্থে শিক্ষায় এমন বিনিয়োগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
কিন্তু তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালায় যে প্রাপ্যতা ও যোগ্যতার কথা বলা হয় আমরা আশা করছি যাদের এমপিওভুক্ত করা হয়েছে তাদেরকে সেটির ভিত্তিতে করা হয়েছে।
রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, কোচিং বাণিজ্যের কারণে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান দুর্বল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের একটি নীতিমালা আছে শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করতে পারবে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা নিজেরা সরকারের এসব নীতিমালা কতটা অনুসরণ করবেন সেটা দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারের দেয়া অর্থ সহায়তা পাওয়ার পরও কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যান বলে অভিযোগ রয়েছে।