এমন কোনো চাপ নাই যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

31

ঢাকা প্রতিনিধি

বিদেশি শক্তির যে চাপই আসুক না কেন, জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সরকার তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এমন কোনো চাপ নাই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে, এটা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, আমার শক্তি একমাত্র আমার জনগণ; আর উপরে আল্লাহ আছে; আর আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে। কাজেই, কে কি চাপ দিল, না দিল- এতে কিছু আমাদের আসে যায় না। জনগণের স্বার্থে যেটা করার আমরা সেটাই করব। জনগণের কল্যাণে যেই কাজ করার সেটাই করব। কাতারে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। বিদেশ সফর থেকে ফিরে বরাবরের মত সাংবাদিকদের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সফরের কর্মকান্ড নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরার পর প্রশ্নোত্তরপর্বে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ উঠে আসা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ইলেকশন, এটা জনগণের ইচ্ছা। জনগণ ভোট দিলে আছি, না হলে নাই। এ নিয়ে আফসোস নাই তো। জনগণ এ সরকারকেই চায় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা কাজ করে মানুষের ভেতরে অন্তত আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ‘উন্মুখ দেশি-বিদেশি এজেন্সি’বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অনেকগুলো এজেন্সি ‘উন্মুখ’ হয়ে আছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ জনের নামে আসছে, ওটার পেছনেও কিছু অ্যাম্বিশন আছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। যাদেরই ইচ্ছা, তারা জনগণের কাছে যাবে, নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু হয়, তার জন্য, আমি তো আগেই বলে দিলাম, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কী কী সংশোধনী এনেছি বা কীভাবে সংস্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের সন্ত্রাস-সংঘাত, ২০০৬ সালের ভোটারবিহীন ভোটার তালিকা এবং ২০০৭ সালের মত নির্বাচন আয়োজনের পথ বন্ধ করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন জনগণের উপর নির্ভর করে, যে জনগণ কীভাবে চায়, আমাদের প্রস্তুতি সবসময় আছে যে, জনগণ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।
বিগত কয়েকটি উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ কি ভোট দিতে পারেনি? পেরেছে তো। নির্বিঘ্নে তারা ভোট দিয়ে গেছে। এই ভোটগুলি নিয়েতো কেউ একটা কথাও বলতে পারেনি। পেরেছে?
সরকারে থাকলেও যে নির্বাচন সবসময় নির্বিঘ্ন হতে পারে, শান্তিপূর্ণভাবে হতে পারে, অবাধ-নিরপেক্ষভাবে হতে পারে সেটাতো আমরা প্রমাণ করেছি। আর আমাদের কী প্রমাণ করতে হবে? আর কি প্রমাণ করতে হবে, সেটাতো আমার প্রশ্ন?
রোজায় বেশি পণ্য কিনে মজুদ নয়
রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে।
আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো।
সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্তু হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি খাতে কাতারের সাথে সহযোগিতার বিষয়টা কিন্তু দীর্ঘ দিনের। প্রথম কাতারে গিয়েছিলাম ২০১০ এ, তখন আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি আছে। প্রায় চৌদ্দ বছরের চুক্তি আছে। আবার সেটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাব, সেটা নিয়ে কোনো অসুবিধা নাই। আমরা এলএনজি আমদানি করব, তাদের কাছ থেকে এবং বাইরে অন্যান্য দেশের সাথেও চুক্তি করছি। তবে হ্যাঁ, আমাদের বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সবাইকে অনুরোধ করব, আজকে আমার সবার কাছে অনুরোধ, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। গ্রামে গ্রামেও চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে, সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।

সংলাপ কার সাথে করব?
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংলাপ কার সাথে করব? আমি ২০১৮ এর নির্বাচনের আগে সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে নির্বাচন থেকে সরায়া তারপর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
১৫ অগাস্ট আমার বাবা-মার হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাকে হত্যার চেষ্টা, বোমা রেখে হত্যার চেষ্টা, যারা করেছে আমি তাদের সাথেও বসেছি শুধু দেশের স্বার্থে।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে সমবেদনা জানতে গিয়ে বিএনপিনেত্রীর বাসায় ঢুকতে না পারার ‘অপমানের’ কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ পারবেন আপনার বাবা-মার হত্যাকারীর সাথে বৈঠক করতে? আপনাকে যদি ওইভাবে অপমান করে, আপনি পারবেন? কে পারবে? যেটুকু সহ্য করেছি, দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে, নিজের স্বার্থে না। এটাতো প্রমাণিত, বাংলাদেশের মানুষের জন্য। তারপর আবার এদের সাথে কিসের কথা বলব।
খালেদা জিয়ার ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনরা এসে ‘আকুতি’ জানানোর কারণে সাজা স্থগিত করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তারপরেওতো, ঠিক আছে অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ, বোন এসে ভাই এসে বোনের জামাই সবাই এসে যখন আমার কাছে আর রেহানার কাছে এসে আকুতি করল, হ্যাঁ তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকার এবং চিকিৎসার সুযোগটা করে দিয়েছি। এইটুকু যে করেছি, সেটাই যথেষ্ট।

ড. ইউনূসকে কেন বিজ্ঞাপন দিতে হলো
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ৪০ বিশ্বনেতার দেওয়া খোলাচিঠি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন প্রশ্ন করে বলেন, আপনি যখন কাতারে ছিলেন, তখন ৪০ জন বিদেশি নাগরিক একটি বিবৃতি বা আপিল করেছেন, সেটা আপনি পেয়েছেন কি না জানতে চাই। সেটা ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে। এই বিবৃতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য আশা করছি।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি একটা ভুল করছেন, সেটা ঠিক বিবৃতি নয়। এটা একটা অ্যাডভারটাইজমেন্ট (বিজ্ঞাপন)। ৪০ জনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা আমাদের বিশেষ একজন ব্যক্তির পক্ষে। এর উত্তর কী দেব, জানি না। তবে আমার একটা প্রশ্ন আছে, সেটা হলো, যিনি এত নামীদামি নোবেল প্রাইজপ্রাপ্ত, তাঁর জন্য এই ৪০ জনের নাম খয়রাত করে এনে অ্যাডভারটাইজমেন্ট দিতে হবে কেন? তাও আবার বিদেশি পত্রিকায়। বিজ্ঞাপন কেন দিতে হলো?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কতগুলো আইন আছে। সে অনুযায়ী সব চলে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে শ্রম আদালত সেটা দেখেন। এ ক্ষেত্রে সরকারপ্রধান হিসেবে আমার তো কিছু করার নেই। কাজেই এখানে আমাকেই বা কেন বলা হলো? তাও বিদেশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কেন?

সরকারের প্রতি আস্থা’ বগুড়াতেও
বিএনপির ভোটের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়াতেও এখন সরকারের অবস্থান দৃঢ় বলে ‘জানতে পেরেছেন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনগণ ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকবেন না, এ নিয়ে কোনো আফসোসও থাকবে না। তবে সাধারণ মানুষ মনে করে এই সরকারের থাকা উচিত।
প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ইলেকশন, এটা জনগণের ইচ্ছা। জনগণ ভোট দিলে আছি, না হলে নাই। এ নিয়ে আফসোস নাই তো।
জনগণ এ সরকারকেই চায় জানিয় তিনি বলেন, আমরা কাজ করে মানুষের ভেতরে অন্তুত আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আজকে আমি বগুড়ার খবর নিলাম। বগুড়ায় গ্রামে-গঞ্জে কিন্তু আমাদের সরকারের প্রতি আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমার দল করে না অন্য দল করে। তাদের মুখ থেকে আমি আজকে সেই তথ্যটা নিয়েছি।
স্মার্ট বাংলাদেশ করব
আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি আমরা নির্বাচনী ইশতাহারেই ঘোষণা দেব। পরবর্তীতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রযুক্তিতে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ করব- সেটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য। সেই ক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ করার জন্য কী কী করণীয়, সেটা তো আমরা করেই দিয়েছি। যা সময় সময়ে পরিবর্তনশীল, পরিবর্তন হবে, পরিবর্ধন হবে, সংশোধন হবে- যেটা যখন যে রকম প্রয়োজন সেই রকম করা হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
মেট্রোরেল, টানেল। এখন তো পাতাল রেলেরও যুগ আসবে। পদ্মা সেতু করেছি। সমগ্র বাংলাদেশ কিন্তু একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ভেতরে এসেছে।

বিএনপি তো গঠনতন্ত্রই মানে না
‘ছায়া সরকার’ গঠনে বাংলাদেশে বিরোধীদলের উদ্যোগ না থাকার বিষয়ে একটি প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্যাডো গভর্নমেন্ট (ছায়া সরকার) কে করবে? যে দল বেশি লাফায়, সেই দলের দুই নেতাই হচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি (বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান)। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।
তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি নিজের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছে বলেও মনে করেন তিনি।