এমনি করে কাটুক আমাদের রমাদান

16

শাহাবুদ্দিন আহমদ চৌধুরী সেলিম

কুরআন নাজিলের মাস, রহমত বরকত ও নাজাতের মাস মাহে রমাদান আমাদের দোরগোড়ায়। হতে পারে এটাই আমাদের জীবনের শেষ রমাদান। তাই আসুন আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল ও ক্ষমার আশায় মহিমান্বিত এ রমাদান মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।
তাহাজ্জুদ : আপনার রমাদান কার্যক্রম শুরু হোক প্রথম রোজার জন্য সেহেরি খেতে উঠার অন্তত আধঘণ্টা আগে। ঘুম থেকে উঠে পবিত্রতা হাসিলের পর জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যান তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের জন্য। ন্যূনতম চার (দুই দুই) রাকাত সালাত আদায় শেষে আল্লাহর দুয়ারে অশ্রæসিক্ত নয়নে বিনম্র হয়ে ধরনা দিতে থাকুন। আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (নামাজ) প্রতিষ্ঠা করো, এটা তামোর জন্যে (ফরয নামাজের) অতিরিক্ত (একটা নামাজ), আশা করা যায় তোমার মালিক এর (বরকত) দ্বারা তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)
সেহেরি খাওয়া : সেহেরি খাওয়া সুন্নাত। ক্ষুধা না থাকলেও অল্প কিছু হলেও খেয়ে নেয়া উচিত। অন্তত এক ঢোক পানি পান করে হলেও এ সুন্নাহ আদায় করুন। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, ‘তোমরা সেহেরি খাও। কারণ সেহেরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ আল বুখারি, হাদিস : ১৯২৩)
নামাজের জন্য অপেক্ষা করা : সেহরি খাওয়া শেষে ফজরের নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। নামাজের জন্য অপেক্ষা করাও সওয়াবের কাজ। এ সময় পুরুষগণ মসজিদে গিয়ে ও মহিলারা জায়নামাজে বসে তাসবিহ তাহলিল পড়তে পারেন। হযরত আনাস রা. বলেন, ‘একরাতে রাসূল সা. এশার নামাজ অর্ধেক রাত পর্যন্ত বিলম্ব করলেন। অতঃপর নামাজ শেষে আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, লোকেরা নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা যতক্ষণ না নামাজের জন্য অপেক্ষায় ছিলে; ততক্ষণ তোমরা নামাজেই ছিলে।’ (সহিহ আল বুখারি, হাদিস : ৬৬১)
ফজরের আযান হলে দুই রাকাত সুন্নত পড়ে ফরজ নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। এ সময় ফজরের ফরজ নামাজ ব্যতীত সূর্যোদয়ের পূর্বে সব ধরনের নফল নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
ইশরাক নামাজ আদায় : ফজরের ফরজ নামাজ আদায়ের পর নামাজের স্থানে বসে থেকে দোয়া দরুদ পড়তে থাকা এবং সূর্য উঠলে ইশরাকের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। যদি একান্ত ঘুমের কষ্ট হয় তখন ঘুম থেকে উঠে আদায় করা। হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় শেষে সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর যিকির করবে অতঃপর দু’রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য একটি হজ ও ওমরা পালনের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।’ (সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ৫৮৬)
গুনাহ থেকে পরহেয করে চলা : মিথ্যা কথা বলা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা। পরনিন্দা, পরচর্চা, গিবত ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা অর্থাৎ মুখকে সংযত রাখা। কানকে মন্দ কিছু শোনা থেকে বিরত রাখা। অফিস-আদালত ব্যবসা, স্কুল-কলেজ বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হলে চোখের হেফাজত করা তথা দৃষ্টি অবনমিত রাখা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ আল বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা : সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে আস্তাগফিরুল্লাহ, সুবহানআল্লাহ, আল হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম পড়া। যিকিরের মাঝে মাঝে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠ করা।
জামাতের সাথে নামাজ আদায় : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা। নামাজের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আল হামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪ বার বলা।
কুরআন তেলাওয়াত করা : রমাদানে যেহেতু প্রতিটি সৎকর্মের সওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয় তাই প্রত্যেকের উচিত এই মাসে যথাসাধ্য বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়ম করে ধারাবাহিকভাবে কুরআন থেকে কিছু অংশ অনুবাদসহ পড়া। সেই সাথে আয়াতের শানেনুযুল, তাফসির, সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও আয়াতের শিক্ষা অনুধাবনের চেষ্টা করা।
দান-সদাকা করা: প্রতিদিন অল্প করে হলেও কিছু দান-সদাকা করা, সাধ্যমতো অভাবী ও গরিব মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। বিশেষ করে শেষ দশ দিন যেন এ আমলটি বাদ না যায়। প্রখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রাসূল সা. পৃথিবীর সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন।’
রোজাদারদের ইফতার করানো: ধনী হোক বা দরিদ্র হোক রোজাদারদের ইফতার করানো একটি স্বতন্ত্র ফজিলতপূর্ণ আমল। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন কাউকে না কাউকে যেন ইফতার করানো যায়। হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে। রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না।’ (সুনানে তিরমিযি, হাদিস : ৮০৭)
সময় হলে দেরি না করে ইফতার করা : আযান হলে ইফতার তাড়াতাড়ি করে নেয়া, বিনা কারণে দেরি না করা। হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (সহিহ আল বুখারি, হাদিস : ১৯৫৭)
এছাড়াও প্রতিদিনের সালাতুত তারাবি ইমামের সাথে শুরু ও শেষ করা, বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। সম্ভব হলে প্রত্যেক নামাজের আগে মেসওয়াক করা। মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সা. বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী