এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী

9

এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে মৃত্যু অবধি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কয়েক দফায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নগর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মহিউদ্দীন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে মারা যান।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি।
তিনি ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। সেই সময় গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন। এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন মহিউদ্দিন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি পালিয়ে কলকাতায় চলে যান। ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন বলে আত্মজীবনীমূলক বইয়ে উলে­খ রয়েছে। তিনি ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের তুলনায় ভোটের ব্যবধানও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। তবে ২০০৯ এর নির্বাচনে প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
চৌধুরীর মেয়াদে তিনি পাঁচটি মাতৃত্বকালীন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালে বিশেষায়িত নবজাতকের যতœ এবং উন্নত গাইনোকোলজিকাল সার্জারির সুবিধা রয়েছে। হাসপাতালের দুইজন কনসালট্যান্ট গাইনোকোলজিস্ট এবং একদল চিকিৎসকের দ্বারা তত্ত¡াবধান করা হয়।
চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম মেয়র যিনি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, যা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর, কর্পোরেশন নয়টি পোস্ট-সেকেন্ডারি কলেজ, কম্পিউটার-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি মিডওয়াইফ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি স্বাস্থ্যসেবা-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বাংলাদেশে প্রথম রেডিওলজি এবং রেডিওগ্রাফি সহ স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়) এবং বয়স্ক সাক্ষরতা প্রসারিত করতে আটটি নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। চট্টগ্রাম শহর কর্তৃপক্ষ সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য আটটি হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র (সংস্কৃত টোল নামে পরিচিত) পরিচালনা করে। সূত্র : উইকিপিডিয়া