এবার ‘মৃত’ দীলিপের জীবিত ফেরা!

75

নারায়ণগঞ্জের সেই কিশোরী কিংবা বায়েজিদের জয়নালের মতই আরেক চাঞ্চল্যকর ও নাটকীয় ঘটনার সন্ধান মিলেছে। প্রায় দেড় বছর আগে হালিশহরের ফইল্যাতলী খালপাড়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার কথিত ভিকটিম ‘মৃত’ দীলিপ আচার্য জীবিত ফিরলেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া মামলার আসামি জীবন আচার্যের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী গতকাল মঙ্গলবার তার জামিন চাইতে গিয়ে উচ্চ আদালতকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। দীলিপ আচার্য জীবিত উদ্ধার হয়েছেন বলেও দাবি তার।
এমন ঘটনা নজরে আসার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কী কারণে এমনটা হয়েছে, তার বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে মামলার সব নথিসহ কথিত ‘মৃত’ ব্যক্তি ও কারান্তরীণ দুই অভিযুক্তকে আগামী ২২ অক্টোবর আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসাথে নিম্ন আদালতের বিচারক কিভাবে এমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন- তা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছেন।
সেদিন পুলিশ যা বলেছিল ঃ নগর পুলিশ ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করে, ক্লু-লেস বা সূত্রহীন একটা মামলার রহস্য তারা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের দেয়া তথ্যে বলা হয়, ওই বছরের ২১ এপ্রিল রাতে নগরের হালিশহরে ফইল্যাতলী খালপাড় এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আনুমানিক ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগুনে তার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যায়। এই ঘটনায় হালিশহর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে লাশটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশ ২৫ এপ্রিল রাতে হালিশহর এলাকা থেকে জীবন আচার্য ও দুর্জয় আচার্য নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে জীবন আচার্য পরদিন বিকেলে তৎকালীন মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার ও বিস্তারিত জানিয়ে জবানবন্দি প্রদান করে। এরপর দু’জনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে দু’জন কারাগারে রয়েছে।
আসামি জীবন আচার্যের জবানবন্দির বরাত দিয়ে নগর পুলিশের ডবলমুরিং অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আশিকুর রহমান জানান, দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর হালিশহরের ফইল্যাতলীর খালপাড়ের পরিত্যক্ত ঘরে আগুনে পুড়ে নিহত হওয়া কিশোরের পরিচয় পাওয়া যায়। তার নাম দিলীপ আচার্য। বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়িতে। তার মা-বাবা কেউ নেই। কিশোর দীলিপ সীতাকুন্ডে একটি কারখানায় কাজ করত। গ্রেপ্তার হওয়া আসামি জীবন এবং দুর্জয়ও তার সাথে সেখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দুই মাস আগে গাঁজা সেবনের জন্য কিশোর দিলীপের কাছ থেকে ৫০ টাকা ধার নেন তার সহকর্মী জীবন ও দুর্জয়। ওই টাকা চাওয়ায় দিলীপকে তারা গালাগাল করেন। একপর্যায়ে দিলীপ তাদের চড় মারে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবন ও দুর্জয় খুনের পরিকল্পনা করেন। খুনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা ওই বছরের গত ১৮ এপ্রিল দিলীপকে বেড়ানোর কথা বলে সীতাকুন্ড থেকে হালিশহর নিয়ে আসেন। এরপর নাথপাড়ায় একটি জঙ্গলের ভেতর নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করেন। পরে লাশটি বস্তাবন্দী করে পার্শ্ববর্তী একটি খালে ফেলার জন্য রাখেন। কিন্তু নিজেরা ধরা পড়ার আশঙ্কায় লাশটি খালে ফেলেন নি।
পুলিশ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান তখন আরও জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন রাতেই বস্তাবন্দী লাশটি একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যান তারা। সীমানা দেয়ালের ওপর দিয়ে এটি পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে ফেলা হয়। পরে আগুন দিয়ে লাশটি পুড়ে তারা চলে যান। তিন দিন পর দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।