এবার মাঠ পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে বড় দুই দল

12

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাঠে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এবার পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে দুই দলই। এবার এক দফা আন্দোলনে নামছে বিএনপি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এ জন্য তৃণমূল নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে জাগাতে চায় দলটি। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান আন্দোলনের বিপরীতে বিভিন্ন এলাকায় ‘শান্তি সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী শনিবার বিএনপির দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচির দিন সারাদেশে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। ইতোমধ্যে এ কর্মসূচি সফল ও সমন্বয় করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও দক্ষিণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বান্দরবানে অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, রাঙামাটিতে দিপঙ্কর তালুকদার এমপি ও কক্সবাজারে ধর্ম সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ৪০ জেলায় আওয়ামী লীগে ৫৩ কেন্দ্রীয় নেতাকে এ কর্মসূচি সফল করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অবশ্য পাল্টাপাল্টি নয়, নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিভাগ, জেলা-উপজেলা, মহানগর-থানা, ইউনিয়ন- প্রয়োজনে ওয়ার্ডেও কর্মসূচি থাকবে। নির্বাচন পর্যন্ত সারাদেশে কর্মসূচি থাকবে। এখানে কারও সঙ্গে পাল্টাপাল্টি নয়, এটা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিরই অংশ।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০১৩-১৪ সালে আগুন-সন্ত্রাস, রাস্তার পাশের গাছ কাটা, রেলস্টেশন, বিদ্যুৎ স্টেশন, সরকারি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া দেখেছি। নাশকতা থেকে জানমাল রক্ষা করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।
এদিকে বিএনপির ঘোষিত ইউনিয়ন পদযাত্রা কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তিনি সরকার পতনের আন্দোলনকে একেবারে তৃণমূলে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন। সারাদেশের ৪ হাজার ৫৭১ ইউনিয়নে ৪১ হাজার ১৩৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওইদিন একযোগে এসব ওয়ার্ড থেকে মিছিল বের করে ইউনিয়ন সদরে যাবেন নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু হবে। কমপক্ষে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত এ পদযাত্রা করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা, জেলা পর্যায়ের নেতারা কার্যক্রম শুরু করেছেন। কর্মসূচি সফল করতে উঠান বৈঠক, হাট-বাজারে পথসভা, প্রচারপত্র বিতরণ, মিছিলসহ নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি বৈঠক করছেন, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন। আয়োজন চলছে ওয়ার্ড আর ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ঢল নামানোর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উস্কানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। আওয়ামী লীগ এবার পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। এবার প্রথম আমরা আওয়ামী লীগকে রিঅ্যাক্ট করতে বাধ্য করেছি। এটা নতুন একটা ফ্যানোমেনা। অর্থাৎ তারা ভীত, সন্ত্রস্ত। তারা এখন নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্নভাবে অপকৌশলে এই কাজগুলো করছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা। নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত¡াবধায়নে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।’
গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে রয়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে দলটি। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী রাখতে চায় বিএনপি, যাতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সফল করা যায়। তৃণমূলকে আরো চাঙ্গা করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরো উজ্জীবিত হবেন। একইসাথে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় দলটি। ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করার পর সময় ও সুযোগ বুঝে সরকার পতনের এক দফা নিয়ে মাঠে নামতে চান তারা।
এদিকে গত সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বেঠক করেছেন। এ বৈঠকে ইউনিয়ন পদযাত্রা সফল করতে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। শুধু জেলা, উপজেলার নেতারা নন, কেন্দ্রীয় নেতাদেরও কমূসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এলাকাভিত্তিক যেসব নেতা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন, সেসব নেতাদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনে এমপি প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদেরও এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের দাম কমানো, খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের মুক্তি, আওয়ামী সন্ত্রাস ও সরকারের দমন-নিপীড়ন বন্ধ, গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে।