এবার মশার ওষুধ কেনাকাটায়ও মিলল অনিয়ম

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুরেফিরে বারবার মশার ওষুধ কিনেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। অভিযান চালিয়ে এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নগরের টাইগারপাসে অবস্থিত চসিকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।
জানা গেছে, দুদক কর্মকর্তারা সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ের দোতলায় অবস্থিত মেয়রের একান্ত সচিবের কক্ষে যান। মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, মশা মারার ওষুধ কেনায় নিয়ম মানে না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সরকারি তহবিলের টাকায় কেনাকাটা করতে হয় ই-জিপির (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে; দিতে হয় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু দরপত্র না দিয়ে ‘পছন্দের’ ঠিকাদারের কাছ থেকে কেনা হয় ওষুধ। এই ‘অনিয়ম’ বারবার করে যাচ্ছে সংস্থাটি। পছন্দের সেই ঠিকাদার হলেন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক অরভিন সাকিব ওরফে ইভান।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন চলতি বছর জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ৬ হাজার ৩৫০ লিটার মশা মারার ওষুধ কেনে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কেনা হয়েছিল ৬ হাজার ৪০০ লিটার ওষুধ। এসব ওষুধের জন্য সিটি কর্পোরেশনের ব্যয় হয় ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা। সিটি কর্পোরেশন ‘পছন্দের’ ঠিকাদারের কাছ থেকে ওষুধ কেনা ‘জায়েজ’ করতে গণখাতের ক্রয়বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) ব্যবহার করে। অথচ এই ধারা অনুযায়ী অতিজরুরি বা প্রয়োজনীয় পণ্য, কার্য এবং সেবা ক্রয় করার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করা যাবে না। এ জন্য ওষুধ কেনার ব্যয় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে না দেখানোর জন্য কয়েকটি লটে ভাগ করে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়।
অভিযান চলাকালে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন।
অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মশার ওষুধ নিয়ে অনিয়মের একটা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। গত এক বছরে বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭৭ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। সরকারি ক্রয়বিধি অনুযায়ী, ৫ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করতে হলে দরপত্র আহবান করতে হয়। কিন্তু একই ব্যক্তিকে কাজ দিতে ৫ লাখ টাকার নিচে রাখতে ১৬ লটে ভাগ করে ওষুধ কেনা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।